গৌরীপুরের রামগোপালপুর

জমিদারবাড়ি ১২টি পরিবারের দখলে

বাড়িতে রামগোপালপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়, একটি মন্দির ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কিছু বসতবাড়ি রয়েছে।

রামগোপালপুর জমিদার বাড়ির এই ছবিটি গত বুধবার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

রামগোপালপুর জমিদারবাড়ি হিসেবে পরিচিত বাড়িটি বর্তমানে ১২ পরিবারের দখলে রয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে এ জমিদারবাড়ির দখল শুরু হয়। তবে দখলদারদের উচ্ছেদে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, দখল উচ্ছেদ করা হলে এটি পর্যটকদের আগ্রহ বাড়াবে।

প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটির অবস্থান ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর গ্রামে। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক থেকে আনুমানিক ৩০০ মিটার দূরে বাড়িটির অবস্থান। এ বাড়ির পাশ ঘেঁষে রামগোপালপুর-গৌরীপুর পাকা সড়ক।

সম্প্রতি রামগোপালপুর জমিদারবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ এ বাড়ির ভেতর রয়েছে রামগোপালপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়, একটি মন্দির ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কিছু বসতবাড়ি।

ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ৬ দশমিক ৭৩ একর জমিতে বাড়িটি অবস্থিত। বর্তমানে চারপাশে অনেক দখলদার থাকলেও তাঁদের উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেই।

হেলাল উদ্দিন জানান, তিনি এসব অবৈধ দখলের বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না।

বাড়িটিতে ঢোকার পথে কোনো সীমানাপ্রাচীর না থাকলেও এখনো রয়েছে জমিদারদের নির্মিত জরাজীর্ণ ফটক। ভেতরে রয়েছে জমিদারদের ব্যবহৃত চারটি বড় ঘর। ইট, কাঠ ও টিনের তৈরি ঘরগুলোর একটিতে বাস করছে এক পরিবার। বাকি তিনটি ঘরের দুটি দেখতে পেলেও অবৈধ দখলে আড়াল হয়ে যাওয়া একটি ঘর এখন আর চোখে পড়ে না পর্যটকদের।

জমিদারদের নির্মিত একটি ঘরে বসবাস করেন ১০০ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধ আক্কাস আলী। আক্কাস আলীর দাবি, তিনি জমিদারি আমলে এ বাড়ির কর্মচারী ছিলেন। পরে জমিদারির অবসান হলে তিনি এ বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। আক্কাস আলীর অসুস্থ এক ছেলেসহ আরও কয়েকজন বসবাস করেন ওই ঘরে। ঘরটির চারপাশে নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে।

এ জমিদারবাড়ির ভেতর গড়ে ওঠা এক পরিবারের সদস্য রুমেলা আক্তার জানান, তাঁরা বংশপরম্পরায় ১৯৭১ সালের আগে থেকে এ বাড়িতে বসবাস করছেন। এ ছাড়া আরও একাধিক পরিবারের সঙ্গে কথা হলেও তাঁরা অবৈধ দখলের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন নি।

জমিদারবাড়ির ভেতরে রানির গোল পুকুরসহ মোট চারটি পুকুর রয়েছে। পুকুরগুলো স্থানীয় প্রশাসনের অধীনে থাকলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না।

ইতিহাস লেখক রায়হান উদ্দিন বলেন, গৌরীপুরে ৫০টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রয়েছে। রামগোপালপুর জমিদারবাড়িটির নাম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার অন্তর্ভুক্ত করা হলে গৌরীপুরের পর্যটন আরও সমৃদ্ধ হবে।

ইউএনও হাসান মারুফ বলেন, ‘আমরা এ জমিদারবাড়ির ১২ জন দখলদারের নামের তালিকা করেছি। তাঁদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।’