বিএনপি দূরের কথা, গত ১৫ বছরে ফাহমি গোলন্দাজের (বাবেল) সঙ্গে বিরোধ আছে, এমন কোনো আওয়ামী লীগের নেতাও সভা–সমাবেশ করতে পারেননি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। তাঁর ন্যূনতম বিরোধিতা করলেই করা হতো এলাকাছাড়া। নিজের নির্বাচনী এলাকা গফরগাঁওয়ে এমনই ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেছিলেন সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি নিজেই এবার এলাকাছাড়া।
ফাহমি গোলন্দাজ ও তাঁর অনুসারীরা এলাকাছাড়া হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে স্বস্তির পাশাপাশি নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে বিএনপির বিভিন্ন পক্ষ নিয়ে। ৫ আগস্টের পর থেকে গফরগাঁওয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার পক্ষে পৃথক পৃথক শোডাউন চলেছে।
সোমবার গফরগাঁও উপজেলায় গিয়ে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। পাঁচবাগ ইউনিয়নের গলাকাটা গ্রামের রিকশাচালক কাজল মিয়া বলেন, এখন অনেক শান্তি। মানুষের মধ্যে এখন কোনো ভয় নাই। আগে মানুষ ভয়ে কথা বলত না। নেতাদের (আওয়ামী নেতা) নামে কথা বললেই মানুষকে ভয় দেখানো হতো।
কাজল মিয়া অনেক শান্তির কথা বললেও পৌর শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় একজন ইজিবাইকচালক নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর থেকেই গফরগাঁওয়ে অনেকের বাড়িতে হামলা–ভাঙচুর হয়েছে। এতে মানুষ ভয়ের মধ্যে আছে।
৫ আগস্টের পর থেকে ফাহমি গোলন্দাজ ছাড়াও ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে। সংসদ সদস্যদের অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতারাও এলাকাছাড়া। অনেকের বাড়িঘরে হামলা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ময়মনসিংহ–১০ (গফরগাঁও) আসনে ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফাহমি গোলন্দাজ। সেই থেকে গত ১০ বছরে তাঁর অনুসারীরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করেন। ফাহমির বাইরে আর কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকেই এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হতো না। এ সময়ে বিএনপির নেতারা গফরগাঁওয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি করার সাহস পেতেন না। কেউ কোনো কর্মসূচি পালন করতে গেলেই ফাহমির লোকেরা হামলা করতেন।
তুচ্ছ ঘটনায় নিজের অনুসারী তৎকালীন পৌর মেয়র ইকবাল হোসেনকে ফাহমি গোলন্দাজ এলাকা থেকে বিতাড়িত করেন। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন পৌর মেয়রের জন্মদিনে মেয়রের প্রবাসী এক বন্ধু ফেসবুকে পোস্ট করে শুভেচ্ছাবার্তায় লিখেছিলেন, আগামীতে তাঁকে (ইকবাল) গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান। এই শুভেচ্ছাবার্তা ফাহমি গোলন্দাজের চোখে পড়লে তিনি ইকবালকে এলাকাছাড়া করেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিএনপি এখানে সরব হয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচজন নেতার পক্ষে পৃথক পৃথকভাবে শোডাউন করা হয়েছে। এই পাঁচ নেতা হলেন গফরগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবি সিদ্দিকুর রহমান, পাগলা থানা বিএনপির সভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল রহমান সুলতানের ছেলে মুশফিকুর রহমান, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান বাচ্চু ও সাত্তার খান। এই পাঁচ নেতার নেতৃত্বে চলছে পৃথক শোডাউন ও কর্মসূচি।
পাগলা থানা বিএনপির সভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, গফরগাঁও উপজেলা, পৌর ও পাগলা থানা বিএনপির মোট তিনটি কমিটি রয়েছে। তিনটি কমিটি পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে। যে কারণে মনে হয় তিনটি পক্ষ। এর বাইরে কেউ কেউ কর্মসূচি পালন করেন। বিএনপি যেহেতু বড় দল, সে কারণে কিছুটা প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু কোনো পক্ষ নেই।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যাঁরা বিএনপির করি, তাঁরা সবাই আমরা জিয়াউর রহমানের কর্মী। এটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তবে যাঁরা গ্রুপ করেন, তাঁরা কেউ বিএনপির প্রকৃত কর্মী নন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন সুযোগসন্ধানী। তাঁদের আমি বিএনপির বলে মনে করি না।’