গরুর দুধের ছানার সঙ্গে চিনি ও নানা উপকরণ মিশিয়ে তৈরি তালতলের ‘রসগোল্লা’। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এই রসগোল্লার কদর আছে পাশের উপজেলা লোহাগাড়া আর চন্দনাইশেও। বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসবসহ নানা উপলক্ষে এই রসগোল্লার বিক্রি বেড়ে যায়।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে তালতল বাজার। বাজারটি উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম নলুয়া গ্রামে অবস্থিত। ওই বাজারের ছয়টি মিষ্টির দোকানের রসগোল্লা তালতলের রসগোল্লা নামে পরিচিত। সব কটি দোকানের রসগোল্লার মান ও স্বাদ একই রকম।
সাতকানিয়া সদর, কেরানীহাট, বাংলাবাজার, দেওদীঘি ও ফুলতলাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নামী মিষ্টির দোকান থাকলেও চাহিদার শীর্ষে তালতলের রসগোল্লা। স্থানীয় লোকজন জানালেন, তালতলের রসগোল্লা বাটিতে নিয়ে একসঙ্গে আধা কেজি পরিমাণও খাওয়া যায়। গরম রসগোল্লার সঙ্গে পাউরুটি আর পরোটা একেবারে লাজবাব। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গেলে এই রসগোল্লা সঙ্গে নেওয়াটা এখানকার রেওয়াজ।
তালতলের মিষ্টির দোকানি ও পাশের পশ্চিম নলুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২৩-২৪ বছর আগে তালতল এলাকায় প্রদীপ বল নামের এক ব্যক্তি একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে রসগোল্লা বিক্রি শুরু করেন। এর ১৩ বছর পরে সেখানে প্রদীপ বলের চাচাতো ভাই রণধীর বল রসগোল্লার আরেকটি দোকান দেন। এভাবে তালতল বাজারে ছয়টি মিষ্টির দোকান গড়ে ওঠে।
তালতলের ছোট আকারের রসগোল্লা প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১৭০ টাকা করে। আর বড় আকারের রসগোল্লার কেজি ৩০০ টাকা। এ ছাড়া রসমালাই ও মালাই মিষ্টি ৩০০ টাকা করে বিক্রি হয়।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, প্রদীপ বলের বাবা হরিপদ বল ও রণধীর বলের বাবা অশ্বিনী বল—এই দুই ভাই পাকিস্তান আমলে বাড়িতে রসগোল্লা তৈরি করে বিভিন্ন বাজার ও মেলায় বিক্রি করতেন। প্রদীপ ও রণধীর উত্তরাধিকার সূত্রেই রসগোল্লা তৈরির কৌশল রপ্ত করেছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে তালতলের প্রদীপের রসগোল্লার দোকানে গেলে কথা হয় সাতকানিয়ার চরতির তুলাতুলির হোসনে আরা বেগমের সঙ্গে। তিনি মেয়ের শ্বশুরবাড়ির জন্য পাঁচ কেজি রসগোল্লার অর্ডার দিয়েছেন। হোসনে আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, আত্মীয়ের বাড়িতে এই রসগোল্লাই তিনি নিয়ে যান। স্বাদে ও মানে অতুলনীয়। দামও হাতের নাগালে।
ওই দোকানে গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী দিদারুল ইসলাম, আবু জায়েদ ও মোহাম্মদ রাকিব রসগোল্লার সঙ্গে পাউরুটি খাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তাঁরা বলেন, চন্দনাইশ থেকে রসগোল্লা খেতে বন্ধুরা মিলে এখানে এসেছেন। এই রসগোল্লার খ্যাতি আছে। তাই সুযোগ পেলেই খেতে আসেন তাঁরা।
বাবার কাছ থেকে রসগোল্লা তৈরি রপ্ত করার পর থেকে প্রদীপ বল (৪৭) রসগোল্লা, রসমালাই, মালাই ও ঘি তৈরি করে আসছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখ, ঈদ, দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন পালা পার্বণের সময় দিনে পাঁচ মণ পর্যন্ত রসগোল্লা বিক্রি হয়। তালতলের প্রতিটি মিষ্টির দোকানের রসগোল্লার মান একই। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্যান্য সময়ে ৩০ কেজি থেকে দেড় মণ পর্যন্ত রসগোল্লা বিক্রি হয়ে থাকে এখানকার প্রতিটি দোকানে।
আরেক রসগোল্লার দোকানি রণধীর বল প্রথম আলোকে বলেন, তালতলের রসগোল্লার স্বাদ নিতে দূরদূরান্ত থেকেও তরুণ-তরুণীসহ অনেক লোকজন আসেন। সাতকানিয়া সদর, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশের অনেক এলাকা থেকে মোটরসাইকেল কিংবা ব্যাটারি রিকশায় করে অনেকেই এসে রসগোল্লা কিনে নিয়ে যান।
সাতকানিয়া যুগ্ম জেলা জজ আদালতের আইনজীবী হাফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালতলের রসগোল্লার সুনাম এলাকার প্রত্যেকের মুখে মুখে। মাঝেমধ্যে মিষ্টি খেতে মন চাইলেই কয়েকজন সঙ্গীসহ মোটরসাইকেলে ২১-২২ কিলোমিটার দূরের তালতলে চলে যাই। আসার সময় পরিবারের সদস্যদের জন্যও রসগোল্লা কিনে আনি।’