ময়ূর নদ সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে খনন করার দাবি

সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে ময়ূর নদ খনন করার দাবিতে আজ শনিবার খুলনার গল্লামারি এলাকায় নদের পাড়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সংবাদ সম্মেলন করে
ছবি: প্রথম আলো

সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করে খুলনা নগরের ময়ূর নদ খনন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের গল্লামারী এলাকায় ময়ূর নদের পূর্ব পাড়ে সংবাদ সম্মেলন করে ওই অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনা জেলা শাখা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এখন নদ নদের আংশিক খনন করা হচ্ছে। এতে খুলনা নগরের জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কয়েক বছর আগে ময়ূর নদের সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে পরে ওই পতাকা কে বা কারা তুলে ফেলেছে। এ ছাড়া ময়ূর নদ খনন করার কথা ছিল পানি শুকিয়ে খননযন্ত্র ও শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পানি না সেচে পানির মধ্যেই খননকাজ চলছে। এতে যে উদ্দেশ্যে ময়ূর নদ খনন করা হচ্ছে, তা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সংবাদ সম্মেলন থেকে ময়ূর নদের পুরো ২০ কিলোমিটার খননসহ সংযুক্ত খালগুলো খনন করার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাপার জাতীয় পরিষদ সদস্য ও খুলনা জেলা সমন্বয়কারী মো. বাবুল হাওলাদার। তিনি বলেন, ময়ূর নদ খুলনা শহরের প্রাণ। এটি মানুষের জীবন-জীবিকা ও টিকে থাকার উৎস। মানুষের প্রয়োজনেই এই প্রাকৃতিক সম্পদ সৃষ্ট। এই অমূল্য সম্পদ মানুষ নিজেদের স্বার্থেই ধ্বংস করছে।

বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদের বয়রা শ্মশানঘাট থেকে সাচিবুনিয়া সেতু ও ক্ষেত্রখালী-খুদিয়া নদীর আড়ংঘাটা কালভার্ট থেকে বয়রা শ্মশানঘাট পর্যন্ত মোট পাঁচ কিলোমিটার খনন করছে। কিন্তু এ নদ বিল ডাকাতিয়া থেকে উৎপন্ন হয়ে ক্ষেত্রখালী-খুদিয়া নাম ধারণ করে বয়রা শ্মশানঘাট এলাকায় নাম পরিবর্তিত হয়ে ময়ূর নদ ধারণ করে আলুতলা এলাকায় রূপসা নদীতে পড়েছে। সিটি করপোরেশন মূলত নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। কিন্তু ময়ূর নদ বাঁচাতে নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। একটি নদীর আংশিক খনন করে তার প্রবাহ নিশ্চিত করা বা বাঁচানো সম্পূর্ণ বাস্তবতা পরিপন্থী। শুধু তা-ই নয়, আংশিক খননের ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টিও যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়।

সমগ্র নদটি একটি সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় এনে আলুতলা এলাকার ১০ গেট থেকে বিল ডাকাতিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদ সংযুক্ত খালসহ খনন করে উজান ও ভাটিতে সমান প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান বাবুল হাওলাদার। অন্যথায় ওই প্রকল্পের কাজ শুধু টাকা অপচয় হবে বলেই ধারণা করছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে ময়ূর নদের ওপর গল্লামারী সেতু নির্মাণে নদী শাসনের নামে নদের প্রবাহ যেন বাধাগ্রস্ত বা সংকুচিত না হয়, সেটি বিবেচনায় রাখার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি খুলনা নগর ও ওই অঞ্চলের পরিবেশ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা, জলাবদ্ধতা নিরসন, কৃষিতে সেচ, মৎস্য চাষ, নদীনির্ভর মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন পুনরুদ্ধারে ময়ূর নদ ও এর সংশ্লিষ্ট খালগুলোকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

ময়ূর নদ খননে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার দাবিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, নদী কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এরপরও দাবি বাস্তবায়ন না করলে খুলনার বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ার করেন বক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বাপার খুলনা জেলা সদস্য মুনির চৌধুরী, নিতাই পাল, এস এম দেলোয়ার হোসেন, এস এম মনিরুজ্জামান, পরিবর্তন খুলনার সমন্বয়কারী শিরীনা পারভীন, গ্লোবাল খুলনার সভাপতি শাহ মামুনুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।