ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ব্যায়ামাগারে (জিম) আপত্তিকর ভিডিও ধারণের প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগের এক নেতার নেতৃত্বে এক গৃহবধূ, তাঁর বোনসহ তিনজনকে আটকে রেখে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। ৯৯৯–এ ফোন পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনাস্থল থেকে ব্যায়ামাগারের পরিচালক হাবিবুল্লাহ ভূইয়াসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত বুধবার সন্ধ্যায় শহরের মৌলভীপাড়ায় বিএস ফিটনেস ক্লাব নামের একটি ব্যায়ামাগারে এ ঘটনা ঘটে।
হাবিবুল্লাহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। আটক অন্য দুজন হলেন ওই ব্যায়ামাগারের ফিটনেস প্রশিক্ষক মিতু আক্তার ও তাঁর সহযোগী মো. সাইম। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে ওই গৃহবধূর ভাসুর আইনজীবী আটক তিনজনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৮–৯ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গৃহবধূর পরিবার বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা বলব। তাদের পরামর্শক্রমে ছাত্রলীগের ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আহত ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গৃহবধূ ও তাঁর বোন ওই ব্যায়ামাগারে নিয়মিত ব্যায়াম করেন। সেখানে মেয়েদের ব্যায়াম করার আলাদা ব্যবস্থা ও পুরুষদের যাওয়ার অনুমতি না থাকায় দুই বোন কয়েক মাস আগে সেখানে ভর্তি হন। দুই দিন আগে তাঁরা নিশ্চিত হন মিতু গোপনে তাঁদের ভিডিও ধারণ করছেন। গত বুধবার বিকেলে ওই গৃহবধূ ও তাঁর বোন ভিডিও ধারণের বিষয়ে মিতুকে জিজ্ঞেস করেন। এ নিয়ে মিতুর সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। মিতু একপর্যায়ে বিষয়টি হাবিবুল্লাহ ভূইয়াকে জানান। খবর পেয়ে হাবিবুল্লাহ ব্যায়ামাগারে পৌঁছে মিতুকে সঙ্গে নিয়ে ওই দুই বোনের কাছে যান। এ সময় মিতু চুলের মুঠি ধরে ওই গৃহবধূ ও তাঁর বোনকে মারধর শুরু করেন। খবর পেয়ে তাঁদের বাঁচাতে এক স্বজন ব্যায়ামাগারের ভেতরে যান। হাবিবুল্লাহ ও তাঁর সহযোগীরা লোহার রড দিয়ে ওই স্বজনকে বেধড়ক মারধর করে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁদের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু ফটক তালাবদ্ধ থাকায় তাঁরা কেউই ব্যায়ামাগারের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। কয়েকজন ভিডিও করে ঘটনাটি ফেসবুকে শেয়ার দেন। সেখান থেকে গৃহবধূর ভাসুর এবং মো. ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি ৯৯৯–এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান। পাশাপাশি গৃহবধূর ভাসুরসহ অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থল থেকে ফোন করে বিষয়টি সদর থানা–পুলিশকে জানান। সন্ধ্যায় সদর থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মারধরের শিকার ওই দুই বোন ও আহত স্বজনকে উদ্ধার করে।
ঘটনাস্থল থেকে হাবিবুল্লাহ, মিতু ও সাইমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। গুরুতর আহত হওয়ায় ওই গৃহবধূ, তাঁর বোন ও আহত স্বজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
মামলার বাদী ওই গৃহবধূর ভাসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ব্যায়ামাগারে নারীদের আলাদা ব্যায়াম করার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই ওজন কমাতে ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীর বোন সেখানে ভর্তি হন। আপত্তিকর ভিডিওর প্রতিবাদ করায় তাঁদের মারধর করা হয়। আমার এক স্বজন বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে যান। তাঁকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করেছে পুলিশ।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসাইন আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মুঠোফোন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যায়ামাগারের ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮–৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহর কোমরের বাঁ পাশের ওপরে সামান্য ছুরিকাঘাতের আঘাত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
অভিযুক্তরা কারাগারে থাকায় এ বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।