পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রুস্তম আলী ফরাজীর সমর্থকদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি ও মারধর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ও শামিম শাহনেওয়াজের লোকজন তাঁদের মারধর করেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
গতকাল শুক্রবার রাতে উপজেলার উত্তর শাখারীকাঠি গ্রামের অসীম মণ্ডলের (৪৭) ঘরের দরজা ভেঙে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী নূপুর রানীকে (৩৫) পিটিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাইয়ূম ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অসীম মণ্ডল বলেন, তিনি পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজীর সমর্থক। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামিম শাহনেওয়াজের কর্মী উপজেলার ছোটমাছুয়া গ্রামের মো. বাবু আকনের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জন তাঁর বাড়িতে আসেন। এরপর তাঁরা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁদের মারধর করেন। এ সময় বাবু আকন, আল আমিনসহ কয়েকজন তাঁকে বলেন, ‘কেন্দ্রে যাবি না। ভোটকেন্দ্রে গেলে খুন করব।’
উপজেলার বড়মাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসির হোসেন হাওলাদার বলেন, তাঁর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা রুস্তম আলী ফরাজীর সমর্থক। এর আগে শুক্রবার উপজেলার খেজুরবাড়িয়া গ্রামের স্বপন সাধু নামের এক ভোটারকে মারধর করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শামিম শাহনেওয়াজের কর্মীরা। রাতে এ ঘটনার প্রতিবাদে খেজুরবাড়িয়া বেড়িবাঁধে গ্রামবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার সকালে উপজেলার জানখালী বাজারে তুষখালী ইউনিয়ন হিন্দু মহাজোটের সভাপতি সুমন বেপারীর পথরোধ করে গালাগালি করেন স্থানীয় মামুন আকন নামের এক ব্যক্তি। মামুন আকন স্বতন্ত্র প্রার্থী শামিম শাহনেওয়াজের কর্মী। এ ছাড়া বয়াতিরহাট এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী শামিম শাহনেওয়াজের কর্মীদের মারধরে স্বতন্ত্র প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজীর সমর্থক হারুন মৃধা, আবদুল মালেক হাওলাদার, সগির বেপারী, আলমগীর হাওলাদার, নজরুল হাওলাদার, নাসির খলিফা, মামুন পেয়াদা, মোশারেফ চৌকিদার, মামুন অর রশিদ হাওলাদার আহত হন। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার মিঠাখালী গ্রামের রুস্তম আলী ফরাজীর সমর্থক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন জমাদ্দারকে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে জখম করেন প্রতিপক্ষের লোকজন।
এ বিষয়ে রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার থেকে উপজেলার সাপলেজা, আমড়াগাছিয়া, টিকিকাটা ও তুষখালী ইউনিয়নে আমার সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি ও মারধর করা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
অভিযোগের বিষয়ে শামিম শাহনেওয়াজ বলেন, উত্তর শাখারীকাঠি গ্রামের ঘটনা প্রতিপক্ষরা নিজেরাই নিজেরা ঘটিয়েছে। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে। বড়মাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাঁর লোকদের হুমকি দিচ্ছে।
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, কোথাও অভিযোগ পেলে তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। এ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাশরেকুল আজমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর সঙ্গে নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী ও শামিম শাহনেওয়াজের পক্ষে কাজ করছেন। রুস্তম আলী ফরাজী এ এলাকার চারবারের (১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮) নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। আর শামিম শাহনেওয়াজ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশরাফুর রহমানের বড় ভাই। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। আশরাফুর রহমান এ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে জোটের প্রার্থীকে আসন ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।