চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের জয়নগর জেলেপাড়ার শিশু–কিশোরদের জন্য কোনো খেলার মাঠ ছিল না আগে। শীতকালে আমন ধান কাটা হলে জমিতে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা যেত কিছু সময়ের জন্য। এখন বছরজুড়েই মনের আনন্দে খেলাধুলা করতে পারবে পাড়ার শিশু–কিশোরেরা।
সম্প্রতি তাদের জন্য এখানে করা হয়েছে একটি স্থায়ী মাঠ। পরিত্যক্ত ও দখল করা খাসজমি উদ্ধার করে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে এমন আরও একটি করে খেলার মাঠ তৈরি করবে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ১১টি মাঠ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের জয়নগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসনের উদ্ধার করা প্রায় তিন একর খাসজমির একটা অংশে করা হয়েছে খেলার মাঠ। শীতের বিকেলের সোনালি রোদে সেখানে জমিয়ে ফুটবল খেলছে পাশের জেলেপাড়ার একদল শিশু–কিশোর।
তাদের মধ্যে একজন অপূর্ব দাশ। এ মাঠে খেলতে পেরে কেমন লাগছে—জানতে চাইলে এই কিশোর বলে, ‘আগে সব সময় খেলার সুযোগ পেতাম না আমরা। খেললেও শীতের সময়টায় অন্যের জমিতে ভয়ে ভয়ে খেলতাম। তা–ও কত দিক থেকে কত নালিশ। এখন এ মাঠে সব সময় খেলতে পারব ভাবতেই ভালো লাগছে।’
মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় পর্যায়ে শিশু–কিশোরদের খেলাধুলায় আগ্রহী করে তুলতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের নির্দেশে খাসজমি উদ্ধার করে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মডেল মাঠ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে।
সেই ধারাবাহিকতায় মিরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে একটি করে খেলার মাঠ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার করেরহাট, মঘাদিয়া ও সাহেরখালীসহ ১১টি ইউনিয়নে ১১টি মডেল মাঠ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মাঠ তৈরির পর শুরু হবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির কাজ। এসব মাঠ উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার এলাকায় ফেনী নদীর পূর্ব পাড়ে দৃষ্টিনন্দন একটি খেলার মাঠ তৈরি করেছে উপজেলা প্রশাসন। আগে থেকে এখানে মাঠ থাকলেও অবৈধ বালুমহাল হিসেবে ব্যবহার হতো এর একটা অংশ। এখন মাঠটি পুরোপুরি উদ্ধার হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এটির আরও উন্নয়ন করা হবে।’
উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে খেলার মাঠ তৈরির বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রান্তিক এলাকার শিশু–কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বাড়াতে ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি করে মডেল মাঠ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির প্রথম ধাপে মিরসরাই উপজেলায় এর মধ্যে ১৬টি ইউনিয়নে প্রায় ১৭ একর খাসজমি উদ্ধার করে ১১টি মাঠ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
বাকি পাঁচটির কাজও অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হবে। এ কাজে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। মাঠ তৈরির কাজ শেষ হলে পরের ধাপে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির কাজে হাত দেব আমরা।’