দেশজুড়ে বিএনপির ডাকা অবরোধে গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে এক যুবদল নেতাকে পুলিশ হত্যা করেছে অভিযোগ এনে আজ বুধবার সকাল-সন্ধ্যায় বিভাগের চার জেলায় হরতাল পালন করছে স্থানীয় যুবদল। হরতাল-সমর্থকেরা আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার এলাকায় একটি রেললাইনে আগুন দিয়েছেন।
আজ সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের কদমতলী এলাকার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে দেশের কোথাও কোনো দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। নগরে রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস চলাচল করলেও, তা ছিল সীমিত পরিসরে। দোকানপাট খুব একটা খোলেনি। নগরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পিকেটারদের তৎপরতা ছিল।
হরতাল-সমর্থকেরা দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার এলাকার রেললাইনে আগুন দিয়েছেন জানিয়ে ওই এলাকার একজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ ৯ থেকে ১০ জন যুবক এসে শুকনা গাছের ডাল জড়ো করে রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে তাঁরা স্লোগানও দেন। ৩০ মিনিট পর আগুন দেওয়া যুবকেরা চলে গেলে একসময় আপনা-আপনিই আগুন নিভে যায়।
এ বিষয়ে জানতে সিলেট রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মো. নূরুল ইসলাম বলেন, আগুন দেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। আজ সকাল সোয়া ৬টায় কালনী এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে এবং সোয়া ১০টায় পাহাড়িকা চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। নির্ধারিত সময়ে অন্য ট্রেনগুলোও গন্তব্যের উদ্দেশে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে।
সকাল আটটার দিকে নগরের ওসমানী মেডিকেল রোড থেকে রিকাবিবাজার পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের সমর্থনে মিছিল ও পিকেটিং করেন স্বেচ্ছাসেবক দল সিলেট মহানগর শাখার নেতা-কর্মীরা। এ সময় মিছিলকারীরা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দেন। পাশাপাশি তারা ‘হরতাল হরতাল’ বলেও স্লোগান দেন।
সকাল আটটার দিকে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় ২৫ থেকে ৩০ জন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মী পিকেটিং করেন। এ সময় তাঁরা ‘গাড়িঘোড়া চলবে না, দোকানপাট খুলবে না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘দিলু ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ বলে স্লোগান দিয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে টায়ার ফেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ১৫ মিনিট পর তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে সরে যান।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অবরোধ-হরতালের সমর্থনে পিকেটিং অব্যাহত আছে। মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
মহানগরের পাশাপাশি সিলেট জেলা যুবদলের বিভিন্ন ইউনিট ও নেতাদের নেতৃত্বে পিকেটিং চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা যুবদলের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, জেলায় ১৮টি ইউনিট আছে। এসব ইউনিটের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নেতৃত্বে ভাগ ভাগ করে হরতাল-অবরোধ সফলে পিকেটিং চলছে। তবে সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে হরতাল-অবরোধের মধ্যে সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। যানবাহনের অভাবে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষেরা দুর্ভোগে পড়েন। বাস টার্মিনালগুলোয় হাতে গোনা কিছু যাত্রী ছাড়া কেউ ছিলেন না। তবে প্রতিটি টিকিট কাউন্টার বন্ধ ছিল। বাস না চলাচল করায় টার্মিনালে থাকা যাত্রীরা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারছিলেন না। দূরপাল্লার বাস না চললেও জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জসহ উপজেলা পর্যায়ের কিছু রুটে বিচ্ছিন্নভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার চলাচল ছিল।
দক্ষিণ সুরমা নসিবা খাতুন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রী জানায়, যানবাহন চলাচল কম থাকায় তাদের অনেক সহপাঠী বিদ্যালয়ে আসেনি। তারাও যানবাহনের সংকটে পড়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে এসেছে। এ ছাড়া তাদের মতো অনেককেই আজ হেঁটে বিদ্যালয়ে আসতে হয়েছে। তাই যারা দূরে থাকে, তারা আসতে পারেনি।
কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় কথা হয় মাসুদুর আকবর নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি মৌলভীবাজার যেতে চান। মাসুদুর বলেন, ‘গতকালও অবরোধের কারণে যেতে পারিনি। আজও একই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। রাতের বেলায়ও যান চলাচল করছে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আগামীকালও যেতে পারব না।’
সার্বিক বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ আজ সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কড়া নজরদারি রাখছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাই কোনো আটক কিংবা মামলাও আজ হয়নি।