২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে

ত্রাণ দিতে গিয়ে পানিতে ডুবে তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ

নোয়াখালীতে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পানিতে ডুবে তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে।

এদিকে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে সেবা প্রদানে গাফিলতির অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে হাসপাতালে বিক্ষোভও করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীরা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গতকাল সন্ধ্যায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে আসা শিক্ষার্থীরা জানান, ২৭ আগস্ট ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নোয়াখালীতে আসেন তাঁরা। জেলাটির বিভিন্ন এলাকায় শুকনা খাবার ও চাল-ডাল বিতরণ করেন। এর অংশ হিসেবে গতকাল বেলা একটার দিকে নোয়াখালীর সদর উপজেলার ২ নম্বর দাদপুর ইউনিয়নের খলিফার হাটে ত্রাণ বিতরণ করতে রওনা হন। সেখানে কথা (২১), আরাবী (১৮), সালমান (২২) নামের তিন শিক্ষার্থী দিঘির পানিতে ডুবে যান। পরে তাঁদের উদ্ধার করে ওই দিন বিকেলে হাসপাতালটিতে নেওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠান।

শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, অসুস্থ আরাবীর ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলে হাতে লাগানো ক্যানুলা খুলতে একাধিকবার নার্সকে ডাকেন তাঁরা। কিন্তু নার্স না আসায় পাশের এক রোগীর স্বজন ক্যানুলাটি খুলে দেন। কিন্তু ক্যানুলার মুখ বন্ধ না করায় তাঁর হাত থেকে অনেক রক্ত ঝরে। এতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন আরাবী। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ তিনজনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।

আমরা ত্রাণ বিতরণ করতে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়ব, এটা কখনো ভাবিনি। পানিতে ডুবে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা সরকারি হাসপাতালেও সঠিক চিকিৎসা পাননি। বিষয়টি অত্যন্ত কষ্ট দিয়েছে আমাদের। এখানে ডাক্তার-নার্স—সবাই গাফিলতি করেছে।
ওই দলের স্বেচ্ছাসেবক ও উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্র ফয়সাল ইবনে মাসুদ

ওই দলের স্বেচ্ছাসেবক ও উত্তরা ইউনিভার্সিটির বিজনেস স্টাডিজের ছাত্র ফয়সাল ইবনে মাসুদ বলেন, ‘আমরা ত্রাণ বিতরণ করতে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়ব, এটা কখনো ভাবিনি। পানিতে ডুবে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা সরকারি হাসপাতালেও সঠিক চিকিৎসা পাননি। বিষয়টি অত্যন্ত কষ্ট দিয়েছে আমাদের। এখানে ডাক্তার-নার্স—সবাই গাফিলতি করেছে।’

খবর পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ক্যানুলা খুলে দেওয়া ওই রোগীর স্বজনকে মারধর করা হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

খবরটি শুনে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আশা করছি, এর সঠিক সমাধান হবে।
নোয়াখালীর সিভিল সার্জন মাছুম ইফতেখার

এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের উপতত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক হাসিনা জাহান, সিভিল সার্জন মাছুম ইফতেখার, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিমসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে হাসপাতালের অনিয়ম, রোগীদের হয়রানি ও জিম্মি করে টাকা আদায় এবং দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যসহ বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরা হয়।

শিক্ষার্থীদের তুলে ধরা এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেন হাসপাতালটির উপতত্ত্বাবধায়ক হাসিনা জাহান। ঘটনার পরপর সেখানে উপস্থিত হন সিভিল সার্জন মাছুম ইফতেখার। তিনি বলেন, ‘খবরটি শুনে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আশা করছি, এর সঠিক সমাধান হবে।’