নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। শনিবার বিকেলে ন্দাইলে বীরঘােষপালা গ্রামে
নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। শনিবার বিকেলে ন্দাইলে বীরঘােষপালা গ্রামে

ব্যাটারি চার্জের সময় ইজিবাইক বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেলেন এক পরিবারের চারজন

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় এক পরিবারের চারজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। আজ শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বীরঘোষপালা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, নিহত ব্যক্তিরা হচ্ছেন বীরঘোষপালা গ্রামের মৃত আবদুস ছাত্তারের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭০), ছেলে জামাল উদ্দিন (৪০) ও জামালের দুই মেয়ে ফাইজা মনি (৭), আনিকা (৫)।

ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনের ফসলি জমিতে পাটি বিছিয়ে মরদেহগুলো সারি করে রাখা হয়েছে। পাশে রাখা হয়েছে চারটি খাটিয়া। চারদিকে কান্নার রোল।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, জামাল উদ্দিন ইজিবাইকের চালক। সম্প্রতি জামাল উদ্দিন ও তাঁর ভাই নুরুল হক আলাদা হয়ে যান। জামাল নিজের জমিতে একটি ছাপড়া নির্মাণ করেছেন। ওই ঘরে তিনি তিন মেয়ে ও মাকে নিয়ে বসবাস করতেন। ওই ঘরের ভেতরে শোবার খাট পাতা রয়েছে। পাশে ধান-চালের বস্তা ও সংসারের নানা জিনিসপত্র। খাটের পাশে একটি ইজিবাইক রয়েছে। লোকজন জানান, ইজিবাইকটি এখানে রেখে বিদ্যুৎ সংযোগের সহায়তায় এর ব্যাটারি চার্জ করতেন জামাল উদ্দিন।

জামালের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার রাজধানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়া পদে চাকরি করেন। বাড়িতে স্বামী শাশুড়ি ও দুই কন্যা সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ তাঁকে কৌশলে জানানো হয়েছে। তিনি ঢাকা থেকে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন।

অল্পের জন্য জামালের বেঁচে যাওয়া বড় মেয়ে মাছা. জান্নাতুল মারুফা (৯) জানায়, সে দুপুরের পর ঘরে ঢুকে দেখতে পায় তাঁর বাবা, দাদি ও তাঁর ছাট দুই বান ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তখন সে দাদির শরীরে ধাক্কা দেয়। এ সময় সে (মারুফা) প্রচণ্ড ঝাঁকি খেয়ে ঘরের এক কোণে গিয়ে ছিটকে পড়ে। তখন দাদি বলে চিৎকার করতে থাকলে কিছুটা দূরে পুকুরে গোসলরত বড় চাচা নুরুল হক ছুটে আসেন। নুরুল হক জানান, তিনি এসে শুকনো বাঁশ দিয়ে আঘাত করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করেন। বিদ্যুৎ সংযোগ হওয়ার পর ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান তাঁর মা ছাটভাই ও দুই ভাতিজির কেউ বেঁচে নেই। তাঁর ধারণা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর একে অপরকে বাঁচাতে গিয়ে সবাই প্রাণ হারিয়েছেন।

পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বেঁচে যাওয়া শিশু জান্নাতুল মারুফা। তবে ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মারুফার কাছ থেকেই গণমাধ্যমকর্মী, পুলিশ ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছুটে আসা মানুষ জানতে চাইছেন। মেয়েটি কাতরস্বরে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ফেলছিল। কিছুক্ষণ পর পর সে দৌড়ে গিয়ে দাদি, বাবা ও দুই বোনের মরদেহের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছিল। একপর্যায়ে চাচা নুরুল হক এসে জান্নাতুল মারুফাকে জড়িয়ে ধরেন।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল মজিদ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ করতে গিয়ে চারজন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। নিহত জামালের স্ত্রী বাড়িতে আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।