শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার দুটি গ্রামে পদ্মা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে ওই ২টি গ্রামের ২৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে ৩ দিনে গৃহহীন হয়েছে অন্তত ৫০টি পরিবার। এ ছাড়া ভাঙনের আতঙ্কে আছে আরও ৩০০টি পরিবার।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর জাজিরা উপজেলার নাওডোবা প্রান্তের ৫০০ মিটার ভাটিতে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের অবস্থান। ইউনিয়নের একটি চর পাইনপাড়া, যেখানে অন্তত ২৫ বছর আগে মানুষ বসতি গড়ে। পদ্মা সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলে নাওডোবা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মানুষ পাইনপাড়া চরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। ওই চরটির চার দিকে পদ্মা নদী।
গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত স্রোত ও ঢেউ তৈরি হয়। তখন পাইনপাড়ার চরের মাঝিকান্দি ও আহম্মদ মাদবরকান্দি গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। ওই সময় ওই ২টি গ্রামের ২০০ পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে বসতবাড়ির জমি ও ফসলি জমি হারান। তাঁরা চরের অন্যান্য গ্রামে আশ্রয় নেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হলে নদীতে আবারও স্রোত বৃদ্ধি পায়। এ কারণে গত তিন দিনে ওই দুটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে ৫০টি পরিবার নতুন করে গৃহহীন হয়েছে।
গতকাল সোমবার চর পাইনপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো তাদের ঘর ও স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছে। পাইনপাড়ার বিভিন্ন স্থানে তারা আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙনরোধের কোনো উদ্যোগ পাউবো থেকে নেওয়া হয়নি। ওই এলাকায় এখনো ভাঙনের ঝুঁকি রয়েছে। দ্রুত ভাঙন থামানো না গেলে আরও অন্তত ৩০০ পরিবার বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারানোর ঝুঁকিতে আছে।
মাঝিকান্দি গ্রামের মোশারফ হোসেন ২০ বছর ধরে পাইনপাড়া চরে বসবাস করেন। চরের জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বৃহস্পতিবার তাঁর বসতবাড়ির জমি ও এক বিঘা ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে তিনি নদীর পূর্বপাড়ের আরেকটি তীরে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন। মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরের মানুষ, ভাঙনই আমাদের সঙ্গী। তবে ২০ বছর ধরে আমাদের কোনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়নি। পাইনপাড়ার চরে সুখেই কাটছিল জীবন। হঠাৎ সেই চরটি এভাবে ভাঙনের কবলে পড়বে বুঝতে পারিনি। বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে আমি দিশাহারা।’
আহম্মদ মাদবরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন চরের বিপরীত দিকে পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরের নাওডোবা এলাকায়। পদ্মা সেতুর জন্য বসতবাড়ি অধিগ্রহণ করা হলে তিনি পরিবার নিয়ে পাইনপাড়ার চরে নতুন করে বসতি গড়েন। গত তিন দিনের ভাঙনে হুমায়ুনের বাড়িটি বিলীন হয়ে গেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে ভিটেমাটি সব দিয়েছি। তারপর বাপ-দাদার শেষ ভূমি জেগে ওঠা চরে বসতি গড়েছিলাম। এখন নদীভাঙনে তা–ও পদ্মায় চলে গেল। জানি না, বাকি জীবনে আর নিজের কোনো জমি হবে কি না।’
গত বছর পাইনপাড়া এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিলে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয় বলে জানান শরীয়তপুর পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বণিক। তিনি বলেন, ‘এ বছর ভাঙন দেখা দিয়েছে। কিন্তু আমাদের পাউবোতে কোনো বরাদ্দ না থাকায় এই মুহূর্তে ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।’
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাইনপাড়া এলাকায় পদ্মার ভাঙনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ২০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। বাকিদের সহায়তা দেওয়ার জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভাঙনে বসতভিটা হারানো পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।