ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে মুজিব সড়কের পাশে সমাবেশ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পক্ষের নেতা–কর্মীরা। দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন আহ্বায়কের বিরোধীরা। সোমবার বিকেলে
ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে মুজিব সড়কের পাশে সমাবেশ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পক্ষের নেতা–কর্মীরা। দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেন আহ্বায়কের বিরোধীরা। সোমবার বিকেলে

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতেও ‘এক মঞ্চে’ আসতে পারেনি ফরিদপুর বিএনপি

কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দুই বছর আগে ফরিদপুর বিএনপির রাজনীতিতে বিরোধ শুরু হয়েছিল। এ বিরোধের জেরে দীর্ঘদিন ধরেই আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি করে আসছেন দুই পক্ষের নেতা–কর্মীরা। সর্বশেষ গতকাল সোমবার বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতেও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সমাবেশ করেছে জেলা ও মহানগর বিএনপি।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সমর্থিত অংশ ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে মুজিব সড়কের পাশে সমাবেশ করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। অন্যদিকে জেলা বিএনপির কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ক সমর্থিত অংশ শহরের কাঠপট্টি এলাকায় অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের নিচে শাহ ফরিদ সড়কে অভিন্ন দাবিতে সমাবেশ করে। অবশ্য সমাবেশে কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এখানে বক্তব্য দেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে দুই দিন পরই ১৭ এপ্রিল ঘোষিত কমিটির ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিতে বিএনপির একাংশ ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে এ প্রতিবাদ জানান।

তখন থেকেই ফরিদপুর বিএনপিতে বিভেদ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। দলের বিভিন্ন কর্মসূচি আলাদাভাবে পালন করতে দেখা যায় বিএনপির দুই পক্ষকে। ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সমাবেশে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে বিরোধ কিছুটা স্থিমিত হয়েছিল। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে সেই বিরোধ আবার সামনে এল।

গতকাল প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী। বক্তব্য দেন ফরিদপুর বিভাগীয় দুই সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুফুর রহমান ও সেলিমুজ্জামান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গি, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া স্বপন, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম প্রমুখ।

অপর দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি সিদ্দিকী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান, সৈয়দ জুলফিকার হোসেন, দেলোয়ার হোসেন ও খন্দকার ফজলুল হক, মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজির আহমেদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হোসেন খান প্রমুখ।

দলের প্রধানের মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতেও এক মঞ্চে কর্মসূচি করতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়কের নেতৃত্বে যাঁরা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যন্ত ফরিদপুরের রাজনীতির ময়দানে ছিলেন না। যার কারণে নেতা–কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের নেতৃত্ব তৃণমূল নেতারা মানতে রাজি নন। এ কারণে তৃণমূল নেতা–কর্মীদের চাপে পৃথকভাবে কর্মসূচি করতে বাধ্য হয়েছেন।

তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী প্রথম আলোকে বলেন, দলে সব সময়ই কিছু অতি বিপ্লবী লোক থাকেন। উল্টাপাল্টা কথা বলা তাঁদের স্বভাব। ২৮ অক্টোবরে পল্টনের ঘটনায় পুলিশ হত্যার মামলার আসামি তিনি। সংগঠনের সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া নিজে গুলিবদ্ধ হয়ে কারারুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, জুলফিকার হোসেন ও তাঁর অনুসারীরা কেন্দ্রীয় নেতার অনুষ্ঠান বর্জন করে দলের মধ্যে নিজেরাই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছেন। দলের নীতি–আদর্শের প্রতি আনুগত্য থাকলে কেন্দ্রীয় নেতা অনুষ্ঠানে না এসে পারতেন না।

দলের বিভক্তির বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনা দুঃখজনক। নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আহূত সমাবেশ আমরা একত্রে করতে পারলাম না। এ সমস্যা সাংগঠনিক। এ সমস্যা দূর করতে হলে বিএনপির সাংগঠনিক কমিটিকে ব্যবস্থা বা উদ্যোগ নিতে হবে।’