একসঙ্গে ছয় সদস্যকে হারানো পরিবারটি ভাসছে শোকের সাগরে

একসঙ্গে ছয় সদস্যকে হারানো পরিবারের সদস্যেরা। আজ শনিবার সকালে কেরানীগঞ্জের গদারবাগ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

‘সারা বেলা ভাতিজি রোজার কাছেই ছিলাম। ও সব সময় আমারে বুকে টাইনা নিত, শেষমেশ তারেও আর বাঁচাইতে পারলাম না। আমার সামনে সে চইলা গেল। এই কেমিক্যাল আগুন আমগো পরিবারের ছয়জনকে শেষ করে দিছে।’

আজ শনিবার সকালে কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল শারমিন আক্তারের। তাঁদের বাড়ি কেরানীগঞ্জের গদারবাগ এলাকায়। রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণে এক ভাই, দুই ভাবি ও তিন ভাতিজিকে হারিয়েছেন তিনি।

১৫ আগস্ট মঙ্গলবার ভোররাতে কেরানীগঞ্জের গদারবাগ এলাকায় রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণে নিহত হন ওই এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া (৩০), সোহাগের স্ত্রী মিনা আক্তার (২০) ও দেড় বছর বয়সী মেয়ে তাইয়েবা আক্তার। সোহাগের বড় ভাই সৌদিপ্রবাসী মিলনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩২) ও তাঁর মেয়ে ইশা আক্তারও (১৪) ঘটনার দিন মারা যায়। বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় সোহাগের চার বছর বয়সী মেয়ে রোজা আক্তার ওরফে তানহার।

আজ সকালে কেরানীগঞ্জের গদারবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সদস্যেরা সবাই চুপচাপ। একজন আরেকজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার শক্তিও যেন নেই। তাঁদের শোক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাবাসীর মধ্যেও। বিস্ফোরিত রাসায়নিক গুদামের পাশে একই মালিকের আরও একটি গুদাম রয়েছে। সেখানে কয়েক শ রাসায়নিকের প্লাস্টিকের বস্তা রাখা রয়েছে। এতে এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ঘটনায় আমার মা–বাবা প্রায় বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেছেন। তাঁরা কারও সঙ্গে কথা বলেন না। শুধু কাঁদেন আর গুদামের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এখন তাঁগো বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’

গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে রোজার মৃতদেহ গদারবাগে নিয়ে আসা হয়। পরে রাত দেড়টার দিকে নেক রোজ বাগ এলাকার কবরস্থানে রোজাকে তার মা–বাবার পাশে দাফন করা হয়। রোজার চাচা আরিফ হোসেন বলেন, ‘এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। যাদের জন্য এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল, আমরা তাদের বিচার চাই।’
গদারবাগ এলাকার গৃহিণী সুলতানা ইসলাম বলেন, বিস্ফোরিত গুদামের পাশে একই মালিকের আরও একটি রাসায়নিকের গুদাম আছে। এটা যদি অতি সত্বর সরানো না হয়, তাহলে আবার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তখন হয়তো আরও অনেকের প্রাণ যাবে। তাই এলাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরানো উচিত।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সল বিন করিম প্রথম আলোকে বলেন, গদারবাগ এলাকায় যে সমস্ত রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা রয়েছে, সেগুলো আগামীকালের মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হবে।

রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই এলাকার বাসিন্দা হারুন মিয়া বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে পুরান ঢাকার চকবাজারের রাসায়নিকের ব্যবসায়ী ও স্বাদ গ্লাস অ্যান্ড পলিমার কারখানার মালিক আবুল হাসনাত ওরফে টুটুলকে।