কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শোবার ঘর থেকে এক পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হলে এলাকাবাসী বাড়িটিতে ভিড় করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের রাণীবাজার এলাকায়
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শোবার ঘর থেকে এক পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হলে এলাকাবাসী বাড়িটিতে ভিড় করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের রাণীবাজার এলাকায়

ভৈরবে শোবার ঘরে পড়ে ছিল স্ত্রী-সন্তানদের লাশ, ফ্যানে ঝুলছিলেন গৃহকর্তা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শোবার ঘর থেকে একই পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে একটি কক্ষে চারজনের লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত চারজনের মধ্যে গৃহকর্তা জনি বিশ্বাসের (৩২) লাশ ঝুলছিল বৈদ্যুতিক ফ্যানে। তাঁর স্ত্রী নিপা মল্লিকের (২৬) গলা কাটা ছিল। তাঁদের দুই শিশুসন্তান ধ্রুব বিশ্বাস (৭) ও মেয়ে কথা বিশ্বাসের (৪) লাশ পড়ে ছিল খাটে। পুলিশের ধারণা, স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা পর জনি নিজে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।

জনি বিশ্বাসের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আনারাবাদ গ্রামে। বাবার নাম গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাস। জনি আট বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে ভৈরবে বসবাস করে আসছিলেন। স্বজনেরা জানান, ভৈরব বাজারের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন জনি বিশ্বাস। ৯ বছর আগে গাজীপুরের নির্মল মল্লিকের মেয়ে নিপা মল্লিককে বিয়ে করেন তিনি। জনি-নিপা দম্পতি দুই সন্তান ধ্রুব ও কথা। ধ্রুব স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। নিপা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তিন বছর ধরে শহরের রানীবাজার এলাকার শাহজাহান মিয়ার ভবনের ছয়তলায় চিলেকোঠায় ভাড়া থাকতেন তাঁরা।

প্রতিবেশী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান জনি। পরদিন সোমবার ফিরে আসেন। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে আসেন, বুধবার আবার বাড়িতে যাবেন এবং তিন কক্ষের একটি ঘর নির্মাণের কাজে হাত দেবেন। আজ দুপুরে ভবনের একজন এসে দেখতে পান, ভেতর থেকে দরজা আটকানো। অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা খুলছেন না। ভেতর থেকেও কোনো সাড়াশব্দ নেই। দরজা না খোলায় একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি চলে যান। পরে বেলা তিনটার দিকে আরও কয়েকজন এসে ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। পরে জনির কর্মস্থলের লোকজন এসে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন।

এদিকে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর চারপাশের মানুষ ভবনের আশপাশে ভিড় করেন। খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে জনির মা শিখা রানী বিশ্বাস ও ছোট ভাই সমীর চন্দ্র বিশ্বাস আসেন। ঘরটিকে পুলিশ ও র‌্যাব ঘিরে রাখে। পুরো ঘরে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ ছিল।

এক কক্ষে আপন চারজনের লাশ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিখা রানী ও সমীর চন্দ্র। কথা হয় দুজনের সঙ্গে। মা শিখা রানী বিশ্বাস বলেন, তাঁর চার ছেলে। জনি তৃতীয়। তিনি ছেলের বাসায় কম আসতেন। ঘর করতে ও কীর্তন শুনতে আগামীকাল বুধবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পরে বলেন, ‘আমার ছেলের আর ঘর বানানো, কীর্তন শোনা—কোনোটাই হইল না।’

শিখা রানী বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে উল্লেখ করার মতো অমিল তাঁর নজরে পড়েনি। ছেলের ঋণ-দেনা নিয়েও কোনো দিন কথা হয়নি। কী কারণে এমনটা ঘটল ধারণা করতে পারছেন না। ভাই সমীর চন্দ্রেরও একই কথা। তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতে শোনেননি। অর্থকষ্টের কথাও বলেননি জনি। পুরো বিষয়টি তাঁর কাছে অস্পষ্ট।

তবে প্রতিবেশীরা জানান, সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও মতের অমিলের বিষয়টি তাঁরা কিছুটা ধারণা করতে পারছিলেন। তবে দুজনের কেউ এ বিষয়ে কারও কাছে মুখ খোলেননি। কিছুদিন ধরে জনিকে কিছুটা চুপচাপ দেখা যেত। কথা বলতেন কম।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহিন। ঘটনাস্থলে আছেন র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরাও। মো. শাহিন বলেন, দুর্ঘটনার আলামত সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা শেষে জনি নিজে আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে এমনটা হতে পারে, এখনো জানতে পারেননি তাঁরা।