ভারতবর্ষের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম সংগঠক অশ্বিনীকুমার দত্তের স্মৃতিবিজড়িত সরকারি বরিশাল কলেজের মাঠ রক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মিছিল করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। আজ সোমবার সকালে বরিশাল নগরের অশ্বিনীকুমার হল চত্বরে সরকারি বরিশাল কলেজের মাঠ রক্ষা কমিটি এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে মাঠ সংরক্ষণের দাবি জানালেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তা অগ্রাহ্য করে সেখানে ভবন নির্মাণ করছে। এমনকি গত জুলাই মাসে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে কলেজের পূর্ব পাশে বিকল্প জমিতে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলে সেই সিদ্ধান্তও উপেক্ষা করা হচ্ছে। এ জন্য কলেজের একমাত্র খেলার মাঠ নষ্ট করার এই পরিকল্পনা থেকে কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
মাঠ রক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক লিংকন বায়েন, বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য শহিদুল হাওলাদার, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিরণ কুমার দাস, বরিশাল সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পুষ্প চক্রবর্তী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি টুনু রানী কর্মকার, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের বরিশাল জেলা শাখার সংগঠক তুষার সেন, সরকারি বরিশাল কলেজের শিক্ষার্থী শিবানী শিকদার প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব ও বাসদ নেতা মনীষা চক্রবর্তী।
সমাবেশ বক্তারা বলেন, এই মাঠটি মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্তের স্মৃতিবিজড়িত। তা ছাড়া একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার জন্য মাঠ প্রয়োজন। কলেজের পূর্ব পাশে কলেজের নিজস্ব জমি থাকার পরও মাঠ নষ্ট করে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া রহস্যজনক।
সমাবেশে বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক লিংকন বায়েন বলেন, ২০০০ সালের খেলার মাঠ ও জলাধার সংরক্ষণ আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বা সেটা ভাড়াও দেওয়া যাবে না। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ সে আইনের তোয়াক্কা না করে এই মাঠে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে, এটা দুঃখজনক।
সভাপতির বক্তব্যে শাহ সাজেদা বলেন, শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠের জন্য মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্তের বাসভবন ভেঙে এই মাঠের জায়গা বের করা হয়েছিল। গত জুলাই মাসে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর নতুন ভবন বিকল্প স্থানে নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হলেও আবার কলেজ কর্তৃপক্ষ খেলার মাঠ নষ্ট করে ভবন নির্মাণ শুরু করেছে। কলেজের নিজস্ব বিকল্প জায়গা থাকার পরও একমাত্র খেলার মাঠ নষ্ট করার এই পরিকল্পনা থেকে কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে। অন্যথায় নাগরিকদের নিয়ে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যায়। সেখানে এই দাবিতে বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলী হোসেন হাওলাদার সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এই ভবন নির্মাণের বরাদ্দ আনতে হয়েছে। আমি সরকারের প্রতিনিধি। আমার কী করার আছে? সৌন্দর্য কেউ নষ্ট করতে চায় না। এত বড় ভবন করার মতো কলেজের জায়গা নেই। কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। তাই এই স্থানে ভবন নির্মাণ না করার বিকল্প নেই।’
গত জুলাইয়ে আন্দোলনরত নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বলেন, ‘ওই সময় তৎকালীন সিটি মেয়র এই বৈঠক আহ্বান করেছিলেন। সেখানে আমাদের দুই পক্ষকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল। এখন যেহেতু বিকল্প জায়গা নেই সেখানে, তো আর আলোচনার কিছু নেই।’
তবে মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, গত জুলাই মাসের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিকল্প জমিতে এই ভবন নির্মাণ হবে। কিন্তু তা উপেক্ষা করে এখন মাঠ নষ্ট করেই ভবন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। কলেজের পূর্ব পাশে একটি খালি প্লট রয়েছে। সেখানে এই ভবন নির্মাণ করা যায়।
১৯৬২ সালে কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির সহযোগিতায় এ অঞ্চলের শিক্ষানুরাগী, দানবীর ও ভারতবর্ষের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম সংগঠক অশ্বিনীকুমার দত্তের বাসভবনে নাইট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে নাম পরিবর্তন করে বরিশাল কলেজ রাখা হয়। ১৯৮৬ সালে কলেজটি সরকারীকরণ হয়। এরপর কলেজ উন্নয়নের নামে ১৯৯১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ অশ্বিনীকুমার দত্তের মূল বাসভবনটি ভেঙে ফেলে। কলেজের একটি পুকুর কয়েকবার ভরাট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু নগরবাসীর প্রতিবাদে পুকুরটি আর ভরাট করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।