মহাসড়কে নছিমন, করিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের বেড়া ও সাঁথিয়া অংশের প্রায় ৪০ কিলোমিটারে এসব যানবাহনের চলাচল বেড়েই চলেছে। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ১২ দিনে দুই উপজেলায় তিন চাকার এই অবৈধ বাহনের কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তিনজনের। আহত হয়েছেন ১০ জনের বেশি।
পুলিশ ও পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন চাকার সব ধরনের যানবাহন ধীরগতির বলে মহাসড়কে এগুলোর চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলোর ব্রেকিং–ব্যবস্থা যেমন দুর্বল, তেমনি গঠনও মহাসড়কে চলার উপযোগী নয়। এ ছাড়া এসব বাহনের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণেও এসব চালক নিজে যেমন দুর্ঘটনায় পড়েন, তেমনি অন্য যানবাহনকেও দুর্ঘটনায় পড়তে বাধ্য করে।
পুলিশ ও পরিবহনশ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বেড়া উপজেলার আমিনপুর নতুনবাজার এলাকায় মোটরসাইকেল ও নছিমনের সংঘর্ষে শাহীনুর রহমান (৪৩) নামের এক কলেজশিক্ষক নিহত হন। তিনি মোটরসাইকেলের যাত্রী ছিলেন। ২৩ জানুয়ারি সাঁথিয়া উপজেলার পাঁচ ধোপাদহ নামক স্থানে নছিমন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ইসলাম প্রামাণিক (৬৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন। তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন। এ সময় আরও দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। ২৪ জানুয়ারি সকাল আটটার দিকে পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের সাঁথিয়া উপজেলার পাটগাড়িতে আবদুর রহমান (৭০) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হন। দ্রুতগতির একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে পাশ কাটাতে গিয়ে কাভার্ড ভ্যানটি এ দুর্ঘটনা ঘটায়। একই দিনে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে অটোরিকশার চার যাত্রী গুরুতর আহত হন।
বেড়া ও কাশিনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, দুটি স্থানেই যাত্রী তোলার অপেক্ষায় রয়েছে শতাধিক ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। প্রতিটি ভ্যানে ৮-১০ জন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৫ জন করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগুলো মহাসড়ক ধরে ছুটে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে। দুই বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন হাটে গিয়ে দেখা যায়, আসবাব, গবাদিপশু, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে নছিমন ও করিমন হাটে যাওয়া-আসা করছে। মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে অবৈধ এসব যানের হাটে মালামাল ওঠানো ও নামানোর কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
বেড়া বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় আবু হানিফ নামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক ও রজব আলী নামের নছিমনচালকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, মালামাল বহনের জন্য নছিমন ও করিমন এবং কম দূরত্বের লোকজনের যাতায়াতের জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা খুবই জনপ্রিয়। তাঁদের দাবি, এতে যাত্রীদের যেমন লাভ, তেমনি তাঁদেরও (চালকদের) লাভ। পুলিশ মাঝেমধ্যে একটু ঝামেলা করলেও বেশির ভাগ সময়ই তাঁরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন।
পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের মাধপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন সরকার বলেন, ‘মহাসড়কে তিন চাকার যেকোনো যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছি। এর মধ্যেই সুযোগ বুঝে এগুলো মহাসড়কে নেমে পড়ে। এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান অব্যাহত থাকবে।’