চুয়াডাঙ্গায় এক দিনের ব্যবধানে আজ আবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করেছে। তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলা করেই দুপুরে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা
চুয়াডাঙ্গায় এক দিনের ব্যবধানে আজ আবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করেছে। তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলা করেই দুপুরে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছে শিক্ষার্থীরা

চুয়াডাঙ্গায় এক দিনের ব্যবধানে আবার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল

চুয়াডাঙ্গায় এক দিনের ব্যবধানে আজ রোববার আবার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। শুক্রবারের তুলনায় শনিবার তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রি কমে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছিল জনমনে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার কথা বলা হয়েছিল; কিন্তু পূর্বাভাস ছাপিয়ে এক দিনের বিরতির পর আজ আবার ফিরেছে তাপপ্রবাহ।

চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জের প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ সন্ধ্যা ছয়টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশের মধ্যেও সর্বোচ্চ। একই সময়ে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪৮ শতাংশ। গতকাল শনিবার একই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে আজ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে মেঘের আনাগোনা দেখা গেলেও দুপুর ১২টা থেকে আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে যায়। সূর্যের তাপ সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তিনি বলেন, কাল (সোমবার) থেকে বৃষ্টির যে সম্ভাবনা আছে, তা এখনো উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কাল দুপুরের পর বৃষ্টি শুরু হতে পারে।

চুয়াডাঙ্গায় আজ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রখর রোদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে দেখা যায়। রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্রী তুলি খাতুন বলে, রোদের মধ্যে স্কুলে আসা-যাওয়া ও ভ্যাপসা গরমে শ্রেণিকক্ষে বসে ক্লাস করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ছে। রিকশাচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘গরমের ঠ্যালায় গায় জামা রাকা যাচ্চে না। আবার জামা খুললিও তাপে গা পুড়ে যাচ্চে। খুবই সমস্যায় আচি।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সেই হিসাবে গতকাল মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গেলেও আজ বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ।

প্রতিবছর মার্চ থেকে গ্রীষ্মকাল গণনা শুরু হয়। চুয়াডাঙ্গা পর্যবেক্ষণাগারের রেকর্ড অনুযায়ী, চলতি মৌসুমের মার্চে গড়ে সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২২ থেকে শুরু করে সাড়ে ৩৬ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। মার্চে দুই দিন (১৫ ও ৩০ মার্চ) মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এপ্রিলে তাপপ্রবাহ ভয়াবহ রূপ নেয় দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলায়। ১ থেকে ৫ এপ্রিল তাপমাত্রা ৩৮ থেকে সাড়ে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করে। ৬ এপ্রিল মৌসুমের প্রথম তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি) দেখা দেয় এবং ৩০ এপ্রিল চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

তাপপ্রবাহ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এক মাসের মধ্যে চার দিন ছিল স্বাভাবিক তাপমাত্রা। বাকি ২৬ দিন মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। সারা দেশের মধ্যে এক মাসে ১০ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় চুয়াডাঙ্গায়। এপ্রিলের ধারাবাহিকতায় মে মাসেও তাপপ্রবাহ সমানে চোখ রাঙাচ্ছে। ১ মে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি, ২ মে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি, ৩ মে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি ও ৪ মে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রির পর আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছে।