নেছারাবাদে ইউপি নির্বাচন

বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার ভয়ে নৌকার প্রার্থীর বাড়িতে কর্মী-সমর্থকদের আশ্রয়

হামলার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন কর্মী–সমর্থকেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার পাটিকেলবাড়ি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী মিজানুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণার পর থেকে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকেরা আওয়ামী লীগ মনোনীত পরাজিত প্রার্থী ফারজানা আক্তারের কর্মী–সমর্থকদের ওপর বিভিন্ন স্থানে হামলা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব ঘটনায় এক সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর অন্তত পাঁচ কর্মী। ভয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে আওয়ামী লীগের অর্ধশত কর্মী–সমর্থক পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী ডালিম মিয়ার পাটিকেলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির সামনের স্টেশনারি দোকান ভাঙচুর করেন মিজানুর রহমানের লোকজন। এ সময় ভাঙচুরের দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করায় শিক্ষক ও সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুনের (৫০) ওপর হামলা করা হয়। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সমর্থকেরা অভিযোগ করেন, গতকাল রাতে বিজয়ী চেয়ারম্যানের সমর্থক গুয়ারেখা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হোসেন ও শাকিল সিকদারের নেতৃত্বে একদল যুবক পাটিকেলবাড়ি গ্রামের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী তাইজুল ইসলাম (৪৩), নাঈম সিকদার (৩০), অমিত শেখ (২২) এবং আজ সকালে রতন মাঝি (৫০) ও কুদ্দুস খানকে (৫৫) মারপিট করে। এ ছাড়া পাটিকেলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির সামনে রাহাত হাওলাদারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়।

উপজেলার রাজাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা নুপুর বেগম (৫০) বলেন, ‘আমি নৌকায় ভোট দেওয়ায় গাজী মিজানুর রহমানের লোকজন গালিগালাজ করেছে। নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আমরা অনেকে ভয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’

আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারজানা আক্তার বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় নৌকার কর্মী–সমর্থকদের ওপর বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন হামলা করেছেন। নৌকার কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ভয়ে অনেক নারীসহ কর্মীরা সকালে তাঁর বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিজয়ী চেয়ারম্যান গাজী মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলে তিনি কেটে দেন।

গত ৫ এপ্রিল গুয়ারেখা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রব সিকদার মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে গুয়ারেখা ইউনিয়ন পরিষদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আবদুর রব সিকদারের ছেলে পলাশ সিকদারের স্ত্রী ফারজানা আক্তার।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুব্রত কুমার ঠাকুর। তিনি সমর্থন দেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী মিজানুর রহমানকে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আক্তার হোসেন, গুয়ারেখা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হীরালাল বড়াল ও সাধারণ সম্পাদক মো. কাওসার তালুকদারও তাঁদের পক্ষে কাজ করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মুইদুল ইসলাম গত বুধবার ওই চার নেতাকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মিজানুর রহমানের পক্ষে কাজ করার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। আওয়ামী লীগের একাংশ ও বিএনপির সমর্থন পাওয়ায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গাজী মিজানুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ভোটের দিন সকালে দুই পক্ষ মাঠে কর্মী–সমর্থক নিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। গতকাল সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর পর উপজেলার পাটিকেলবাড়ি গ্রামে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থক আলমগীর হোসেনকে (৩৯) কুপিয়ে জখমের অভিযোগ ওঠে গাজী মিজানুর রহমানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধ সিদ্দিকুর রহমানের বীরনিবাসেও হামলা করেন তাঁরা।

নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাফর আহমেদ বলেন, ‘আমি অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাচ্ছি। ওই ইউনিয়নে পুলিশের টহল জোরদার করা হচ্ছে।’