বরিশালে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে রেকর্ড ৪০৫ ডেঙ্গু রোগী

ডেঙ্গু ওয়ার্ডে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সম্প্রতি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪০৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাশিদা বেগম (৫০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে ১৬ জনের মৃত্যু হলো।

রাশিদা বেগম বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাসিন্দা। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। বর্তমানে বিভাগের সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।

বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আগে বেশির ভাগ রোগীর ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের ইতিহাস থাকলেও এখন স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে নমুনা পরীক্ষা করে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করেছেন কীটতত্ত্ববিদেরা। পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হওয়ায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯২ জন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বরিশালের অন্যান্য হাসপাতালে ৮১ জন, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬, পটুয়াখালীর অন্যান্য হাসপাতালে ৪৬, ভোলায় ৫৩, পিরোজপুরে ৫৭, বরগুনায় ৩১ ও ঝালকাঠিতে ৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮ হাজার ৩৬০ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭ হাজার ৩০০ জন।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঈদুল আজহার পরপরই বরিশালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ছিলেন মাত্র ৪৩৩ জন। মৃত্যু হয়েছিল দুজনের। অথচ আগস্টের প্রথম ৯ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৫৯৩ রোগী। মারা গেছেন পাঁচজন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসেন ৪ হাজার ৮৬৭ জন। এক মাসে ৯ জনের মৃত্যু হয়।

মারা যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ১১ জন, বরগুনার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১, ভোলা সদরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৩ এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বরিশাল বিভাগে ২০১৯ সালের জুলাইতে প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই বছর বিভাগে সাড়ে ৭ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জনের। এর আগে বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্তের কোনো ইতিহাস নেই। এরপর দুই বছর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত বছর পুনরায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। গত বছর প্রায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় ১১ জনের। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, বরিশালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বেশ কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন ২৪০ থেকে ৩০০ জন রোগী হাসপাতালে আসছেন। আজ ৪০৫ জন রোগী এসেছেন, এটা এক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। দিন যত যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততই জটিল হচ্ছে। এখন বিভাগের সব জেলায় সমানভাবে ডেঙ্গু রোগী দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।