যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ চাকলাদারের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এক হাজারের বেশি মানুষকে ভূরিভোজ করানো হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। সোমবার বেলা তিনটার দিকে সদর উপজেলার চূড়ামনকাটি বাজার–সংলগ্ন মেহগনি বাগানে এ আয়োজন করা হয়।
তৌহিদ চাকলাদার তাঁর চাচাতো ভাই। অনুষ্ঠানে ২৯ মে সদর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া তৌহিদ চাকলাদারসহ ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াই করা দুজনকে বিজয়ী করতে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন শাহীন চাকলাদার।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী ভূরিভোজ করানো আচরণবিধির লঙ্ঘন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভূরিভোজের আয়োজন করা হলে অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে কোতোয়ালি থানার পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন শাহীন চাকলাদার। অপর পক্ষে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের আধিপত্যের লড়াই শুরু হয়েছে। শাহীন চেয়ারম্যান পদে তাঁর চাচাতো ভাই তৌহিদ চাকলাদারকে বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে তাঁকে ছাড় দিতে নারাজ যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। তিনিও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিচ্ছেন।
জেলার দুই শীর্ষ নেতা তাঁদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ইতিমধ্যে শহর ও বিভিন্ন ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ করছেন। এর অংশ হিসেবে সোমবার দুপুরে চূড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মান্নান কর্মী সমাবেশের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তৌহিদ চাকলাদার এবং অপর দুই ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ ও জ্যোৎস্না আরা। অনুষ্ঠানে জেলা ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘দল অনেক দিন ক্ষমতায় রয়েছে। তাই যেকোনো ব্যক্তি প্রার্থী হতে চান। অনেকে প্রার্থীও হয়েছেন। তবে আমরা বলতে চাই, আমরা কাউকে হত্যা করব না, কাউকে মারব না। আমরা জবাব দেব, প্রতিবাদ করব ব্যালটের মাধ্যমে। ২৯ তারিখে দেখা যাবে কাদের লোক বেশি। এই সদর উপজেলায় এই নির্বাচনই সুযোগ করে দিয়েছে জানার, কার জনপ্রিয়তা কত। এটা কিন্তু আপনাদের জন্য, আমাদের জন্য জীবনের শেষ লড়াই। আমাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে হবে যেকোনো মূল্যে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গ্রামাঞ্চলে ধানকাটা চলছে। কাজ শেষ করে দুপুরে চূড়ামনকাটি বাজার–সংলগ্ন করাতকলের পেছনে মেহগনি বাগানে নেতা-কর্মী ও সাধারণ লোকজন দলে দলে যোগ দেয়। সমাবেশে আসা লোকজনকে খাওয়ানোর জন্য বাগানে সকাল থেকে রান্নার আয়োজন চলতে থাকে। সেখানে গরু ও খাসির মাংস ছাড়াও সবজি এবং ভাত রান্না করা হয়। কয়েকজন বাবুর্চি দিয়ে দুপুর পর্যন্ত রান্না চলে। সভা শেষে কয়েক পদের খাবার দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়।
অনুষ্ঠানের আয়োজক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, ‘মূলত অনুষ্ঠানটি কর্মিসভা। আমাদের নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের প্যানেল পরিচিতি সভা। এই সভায় আমাদের প্যানেলের তৌহিদ চাকলাদারসহ তিনজন যাতে বিজয়ী হয় সেই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ২০০ নেতা-কর্মী অংশ নেন। আলোচনা শেষে এসব নেতা-কর্মীকে খাওয়ানোর আয়োজন ছিল। ভাত, সবজি, ডাল ও মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছে।’
সদর উপজেলা পরিষদ পরিষদের প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভূরিভোজ করানো হয়েছে। সেখানে হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। বিষয়টি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দেখা উচিত।