একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, আমরা জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উন্নতি লাভ করেছি। এখন আমাদের দেশ গড়ার সময়। দেশকে জানতে হবে, ইতিহাস জানতে হবে। আমাদের চলার পথ মসৃণ নয়, চলার পথ বন্ধুর। আজ যারা কৃতী শিক্ষার্থী হিসেবে এখানে উপস্থিত, তাদের এই বন্ধুর পথ মাড়িয়ে ভবিষ্যতে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব দিতে হবে। নকল কিংবা মুখস্থ নয়, লেখাপড়াকে করতে হবে আত্মস্থ।
আজ মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুর গোর–এ–শহীদ ময়দানে চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন অতিথিরা। প্রথম আলো শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় এই উৎসবের আয়োজন করে।
আজ সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি। ঘণ্টাখানেক পরে বৃষ্টি কমতে শুরু করে। টিপটিপ বৃষ্টি চলছে। এই বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানমঞ্চের সামনে জড়ো হতে থাকে। কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত। কেউ নিবন্ধনের আমন্ত্রণ কার্ড হাতে নিয়ে বুথের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে উপহারসামগ্রী নিচ্ছে। সবার মুখে হাসির ঝিলিক। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে তারা।
সকাল নয়টার দিকে দিনাজপুরের সারদ্বেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সেন্ট ফিলিপস হাইস্কুল ও বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ১ হাজার ৮৭০ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে। এরপর আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। আলোচনার মাঝে মাঝে চলে বন্ধুসভার সদস্যদের কবিতা আবৃত্তি, গান ও নৃত্য পরিবেশনা। এভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান স ম আবদুস সামাদ আজাদ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ স্বাধীনতা আমাদের কাছে। কিন্তু তা অবশ্যই সঠিক কাজে ব্যবহার করতে হবে। জীবন চলার পথে প্রথম স্তম্ভ পার হয়েছ। আরও কয়েকটি কয়েকটি স্তম্ভ বাকি আছে। এ প্লাস পাওয়া বড় কথা নয়। জীবনে সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে নৈতিক শিক্ষার সমন্বয় ঘটিয়ে দেশ গড়ার কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল মান্নাফ কবীর। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মিথ্যা-মাদক-মুখস্থকে ‘না’ বলার শপথবাক্য পাঠ করান। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে হাত তুলে এই তিনটি বিষয়কে ‘না’ বলার শপথ নেয়।
আজ সকালে দিনাজপুরের হাকিমপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন শ্রেয়সী রায়। সঙ্গে এসেছেন তাঁর বাবা ও ছয় বন্ধু। শ্রেয়সী বলে, ‘খুবই ভালো লাগছে। পরীক্ষার পরে বন্ধুদের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। অনেক দিন পর একসঙ্গে হয়ে খুবই ভালো লাগছে। বাবাও আসছে সঙ্গে। সুন্দর আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে অনেক বেশি খুশি লাগছে।’
বীরগঞ্জ মেমোরিয়াল শিক্ষা নিকেতন থেকে এসেছে তমা রায়। সে বলে, ‘অনলাইনে নিবন্ধন করেছিলাম। বন্ধুদের কয়েকজন রংপুরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেছে। সকালে অনেক বৃষ্টি ছিল। খালামণির সঙ্গে অনুষ্ঠানে আসছি। এ রকম সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এত বড় আয়োজন, আমি খুবই আনন্দিত।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান স ম আবদুস সামাদ আজাদ, দিনাজপুর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জলিল আহমেদ, বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদুল হক, ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডি সি রায়, শিক্ষক ফজলুর রহমান, রায়হানুল ইসলাম, শাহজাহান সাজু, প্রথম আলোর নীলফামারী প্রতিনিধি মীর মাহমুদুল হাসান, সৈয়দপুর প্রতিনিধি এম আর আলম ও দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন দিনাজপুর বন্ধুসভার সভাপতি মুনিরা শাহানাজ চৌধুরী। আয়োজন সফল করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন দিনাজপুর, পার্বতীপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী ও হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার বন্ধুরা।
সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।