প্রায় ১৪ বছর ধরে খুলনা নগরের পাঁচটি থানায় বিএনপির কোনো সম্মেলন হয়নি। কয়েক দফা উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি। চলতি মাসে নগরের খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানায় সম্মেলনের তারিখ ( ৮, ৯, ১০ ও ১১ মে) ঘোষণা করা হয়। তবে আজ শনিবার এ সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।
আজ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বেগম রেহানা ঈসা ও সদস্য নুরুল হাসান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মোল্লা মাসুম রশিদকে গ্রেপ্তার এবং পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা তৈরি না হওয়ায় সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।
পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের মামলায় ৪ মে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মাসুম রশীদসহ দলটির চার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৯ এপ্রিল নগরের কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত নির্বাহী কমিটির সভায় খুলনা মহানগরের চার থানায় বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা এবং তিন সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৩০ এপ্রিল থেকে দলীয় কার্যালয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু করে। ১ মে খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা ও দৌলতপুর থানার নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।
৩ মে সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও গ্রহণ করা হয়। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য আগ্রহীরা মনোনয়ন ফরম জমা দেন। ৪ মে দৌলতপুর থানার মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও গ্রহণের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্পন্ন হয়নি।
এদিকে ১ মে নগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম ও তাঁর অনুসারীরা সভা করে নগরের ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড কমিটি ও কাউন্সিল বা ভোটার নির্ধারণ না করে সম্মেলন করাকে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী এবং গোঁজামিলের শামিল বলে মন্তব্য করেন। সভায় সম্মেলন বন্ধ করার জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সম্মেলন স্থগিতের বিষয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির গণমাধ্যম শাখার সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, সম্মেলন বা কর্মিসভার তারিখ পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
শুধু সম্মেলন না বলে সম্মেলন বা কর্মিসভা বলার কারণ জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করার কথা ছিল। তবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে এতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। যেহেতু নগর বিএনপিতে এখনো আহ্বায়ক কমিটি তাই থানায়ও আহ্বায়ক কমিটি করার কথা বলছে কেন্দ্র। সে কারণে সম্মেলন না বলে কর্মিসভা হতে পারে।
একেকটি থানার আওতাধীন ওয়ার্ডগুলোর আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা সরাসরি গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলেও জানান মিজানুর রহমান। তাহলে পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা কেন দরকার, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ার্ড আহ্বায়ক কমিটির কেউ দেশের বাইরে চলে গেছেন; কেউ পদত্যাগ করেছেন—এ রকম ঘটনা আছে। সে কারণে ভোটার তালিকার সংযোজন–বিয়োজন দরকার।
নগর বিএনপি সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে নজরুল ইসলামকে সভাপতি ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। ওই সম্মেলনের আগে থানার কমিটিগুলো করা হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে নগরের ৩১টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে নগরের পাঁচ থানায় বিএনপির সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই সময় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে সম্মেলন স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর নজরুল ইসলাম-মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন নগর কমিটি ভেঙে দিয়ে খুলনা জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম ওরফে মনাকে আহ্বায়ক ও শফিকুল আলম ওরফে তুহিনকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি নজরুল ইসলামকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়। একই দিনে নতুন আহ্বায়ক কমিটি সভা করে খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে খুলনা মহানগরের অন্তর্গত ৩১টি ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের মার্চে নতুন করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেই আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের চার থানার সম্মেলনে ভোট দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা ছিল।