মুন্সিগঞ্জ শহরের ইদ্রাকপুর এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন একটি আবাসিক ভবনের পঞ্চম তলায় বিস্ফোরণসহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে শিশু-নারীসহ একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের কর্মকর্তা মো. রিজভী (৪৫), তাঁর মা শাহেদা বেগম (৬৫), আড়াই বছরের ছেলে মে. রাইয়ান ও স্ত্রী রোজী বেগম (৩০)। আহত চারজনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা ওই ভবনের পাঁচতলার ১২ নম্বর ফ্ল্যাটের ভাড়াটে ছিলেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বিকট শব্দ শুনে এলাকার মানুষ বাইরে বের হয়ে দেখেন, নতুন ওই আবাসিক ভবনের পঞ্চম তলায় আগুন জ্বলছে। চারদিকে মানুষের চিৎকার-আহাজারি শুরু হয়। তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে ঘটনাস্থল থেকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এস এম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাতটার দিকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে বয়স্ক এক নারীর অবস্থা গুরুতর ছিল। এ ছাড়া অন্যরা দগ্ধ ছিলেন। সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায় উৎসুক মানুষের ভিড়। ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। ভবনের সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই বিস্ফোরণের চিহ্ন চোখে পড়ে। ভবনের দোতলা থেকে শুরু করে চারতলার সব কটি ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। ভবনটির পঞ্চম তলায় গিয়ে দেখা যায়, ১২ নম্বর ফ্ল্যাটের সবকিছু আগুনে ঝলসে আছে। তখনো ফ্ল্যাটের কক্ষগুলো থেকে আগুনের তাপ বের হচ্ছিল।
ভবনটির তৃতীয় তলার বাসিন্দা মোহাম্মদ আসাদ বলেন, ‘আমরা ঘুমিয়েছিলাম। বিকট শব্দে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমাদের দরজা ভেঙে পড়ে আছে। আমরা ভেবেছিলাম, এই বুঝি ভবন ভেঙে পড়ছে। তৎক্ষণাৎ দৌড়ে নিচে যেতে লাগলাম। ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা একইভাবে নিচে যাচ্ছিলেন। নিচে গিয়ে দেখি, পঞ্চম তলায় আগুন জ্বলছে।’
বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ মাসের শুরুতে ভবনটির প্রথম থেকে চতুর্থ তলায় ভাড়াটে ওঠেন। প্রতিটি তলায় তিনটি করে ফ্ল্যাট। পঞ্চম তলার দুটি ফ্ল্যাটে ভাড়াটে ছিলেন না। একটি ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন রিজভী ও তাঁর পরিবার।
নাইমুর রহমান নামের স্থানীয় এক তরুণ বলেন, এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আশপাশের এলাকার মানুষজনও শুনেছেন। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এলে তাঁরা সবাই তাঁদের সহযোগিতা করেন। ওই ভবন থেকে আহত ব্যক্তিদের বের করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সবার অবস্থাই খারাপ ছিল। ঘটনাটি কীভাবে ঘটল, তা তদন্ত করা দরকার।
মুন্সিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. আবু ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় ২০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক ত্রুটি অথবা কোনো যন্ত্র থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আবু ইউসুফ বলেন, ‘আমরা বিস্ফোরক অথবা গ্যাসের কোনো আলামত পাইনি। আমাদের ধারণা, কক্ষের সব দরজা-জানালা বন্ধ ছিল। আগুন আবদ্ধ কক্ষে থেকে ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করে। পরিবারটি যখন দরজা খোলে, তখন কক্ষে অক্সিজেন প্রবেশ করে বিস্ফোরণ ঘটায়। এ কারণে ওই ফ্ল্যাটসহ সম্পূর্ণ ভবনের সব কটি কক্ষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’