‘রাচি গ্রামের বাড়িতে ঠিকই এল, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে’

নিহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফসানার কবর জিয়ারত করছেন স্বজনেরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের নকলা উপজেলার চকবড়ইগাছি গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

‘আমার ছোট মেয়ে রাচি খুব মেধাবী ছিল। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি ওর আগ্রহ ছিল বেশ। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সে অংশ নিত। ওর স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে সরকারি কর্মকর্তা হবে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় রাচির অকালমৃত্যুতে তার সেই স্বপ্ন সড়কে মিশে গেছে। সেই সঙ্গে আমাদের সব স্বপ্নও ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের নকলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চকবড়ইগাছি গ্রামের বাড়িতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কিসমত আরা বেগম। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় নিহত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির মা তিনি।

শেরপুর জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে চকবড়ইগাছি গ্রাম। এই গ্রামের মো. রেজাউল করিম ও কিসমত আরা বেগম দম্পতির তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে আফসানা ছিলেন পঞ্চম। আফসানা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে জাবিতে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন। আফসানা জাবির একটি আবাসিক হলে থাকতেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আফসানার বাবা রেজাউল করিম সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। কয়েক বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকার গ্রিন রোডের বাসায় বসবাস করেন। তবে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালধর এলাকায় নিজের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি মাছের খামার পরিচালনা করেন রেজাউল করিম। আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নিতে প্রায়ই গ্রামের বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন তিনি।

নিহত আফসানা করিম রাচি

গতকাল বুধবার রাতে জানাজা শেষে নকলার চকবড়ইগাছি গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে আফসানাকে দাফন করা হয়। এর আগে গতকাল রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আফসানার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। এ সময় এলাকাবাসী ও স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

দুপুরে নকলায় আফসানাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটু পরপর চিৎকার করে কাঁদছেন আফসানার মা কিসমত আরা বেগম। মেয়ের স্মৃতিচারণা করছেন আর বারবার তাঁর নাম ধরে কাঁদছেন। এ সময় কিসমত আরা বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তাঁর বড় মেয়ে ফারজানা করিম ও স্বজনেরা। আর বাড়ির অদূরে আফসানার কবর জিয়ারত করছিলেন স্বজনেরা।

এ সময় আফসানার চাচা ও চকবড়ইগাছি গ্রামের বাসিন্দা আহম্মেদ করিম তপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাচি খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল। পড়ালেখা আর খেলাধুলা নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকত। ওর সঙ্গে ফোনে কথা হতো। ওকে অনেকবার গ্রামের বাড়িতে আসতে বলেছি; কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেনি। রাচি গ্রামের বাড়িতে ঠিকই এল, তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে।’ এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন আহম্মেদ করিম। তাঁর ভাতিজির মতো আর কারও এমন অকালমৃত্যু চান না তিনি। তাই আফসানার মৃত্যুর জন্য দায়ী অটোরিকশাচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিরাপদ সড়কের দাবি জানান তিনি।

আহম্মেদ করিম আরও বলেন, আফসানার ছোট ভাই রাগিবুল করিম ঢাকার সেন্ট যোশেফ স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার পরীক্ষার জন্য আফসানার বাবা রেজাউল করিম ছেলেকে নিয়ে বুধবার রাতেই ঢাকায় ফিরে গেছেন। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন।