ট্রেনের নিচে পড়ে দুই পা হারানো বুলু বেগমের অবস্থা সংকটাপন্ন

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বুলু বেগম। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

চার বছরের নাতনিকে কোলে নিয়ে ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে দুই পা হারানো বুলু বেগমের অবস্থা (৪৫) সংকটাপন্ন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ জানিয়েছেন, বুলু বেগম সার্জিকাল আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) আছেন। তিনি এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় বেঁচে আছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু আপাতত বলা যাবে না।

বুলু বেগমের ছেলে জুয়েল রানা মায়ের সঙ্গে হাসপাতালেই আছেন। আজ দুপুর ১২টার দিকে তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর রাত ২টার দিকে মায়ের চেতনা ফেরে। তখন মা বলছিলেন, তাঁর পায়ে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক মাকে ঘুমের ওষুধ দেন। আজ বেলা ১১টার দিকে মায়ের ঘুম ভাঙে। ঘুম ভেঙে মা কথা বলেছেন। মা আমার জন্য দোয়া করেছেন। বলেছেন, “তোর কোনো অসুবিধা হবে না। আমি ভালো আছি। সুস্থ হয়ে যাব।”’

গতকাল শনিবার সকাল আটটায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের পাশে রেললাইন পার হওয়ার সময় ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহীগামী কমিউটার ট্রেনের নিচে পড়ে বুলু বেগমের দুই পা কাটা পড়ে। এ সময় তিনি তাঁর চার বছরের নাতনি রাবেয়াকে বুকে জড়িয়ে ট্রেনের নিচে পড়েছিলেন। উদ্ধারের পর দেখা যায়, রাবেয়া অক্ষত আছে।

বুলু বেগমের বাড়ি আড়ানি পৌর এলাকার নুননগর মহল্লায়। তাঁর স্বামী রব্বেল আলী স্টেশনে কুলির কাজ করতেন। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি মারা গেছেন। স্বজনেরা বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রায় ২০ বছর ধরে স্টেশনে ওঠাবসা বুলু বেগমের (৪৫)। প্ল্যাটফর্মে ভাতের হোটেল চালান। এভাবেই তাঁর আট ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন। বুলু জানতেন, সকালে ৩ নম্বর লাইনে কোনো ট্রেন আসে না। তাই নাতনি রাবেয়াকে কোলে নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছিলেন। কিন্তু ওই লাইনে ট্রেন চলে আসে। তখন নাতনিকে বুকে জড়িয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে যান বুলু বেগম।

স্টেশনমাস্টার মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজশাহী ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন গতকাল রাজশাহী থেকে আসতে দেরি করে। প্রতিদিন সাড়ে সাতটার মধ্যে ট্রেনটি আড়ানি স্টেশনে আসে। দেরি হওয়ার কারণে তাঁদের বার্তা দেওয়া হয়েছিল যে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে আড়ানিতে রেখে বনলতাকে পার করে দিতে হবে। একই সময়ে ঈশ্বরদী থেকে কমিউটার ট্রেনটি আড়ানি স্টেশনে পৌঁছাবে। এ জন্য সিল্কসিটিকে ১ নম্বরে, বনলতার জন্য ২ নম্বর ফাঁকা রেখে কমিউটারকে ৩ নম্বরে নেওয়া হয়। সাধারণত ৩ নম্বরে এই ট্রেন যায় না। এ জন্য সকালে কয়েক দফা মাইকে বলা হয়েছিল, কমিউটার ট্রেনটি ৩ নম্বর লাইনে ঢুকছে।

গত শুক্রবারও বুলুর হোটেলে ভাত খেয়েছেন স্টেশনমাস্টার মোশাররফ হোসেন। তিনি খুব ভালো করে বুলুকে চেনেন উল্লেখ করে বলেন, শুক্রবার বুলুর এক ছেলের বিয়ে ছিল। এ জন্য গতকাল সকালে ভাতের হোটেল খোলেননি। হয়তো অন্য কোনো কাজে স্টেশনে এসেছিলেন। ঘটনাটি স্টেশন থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১০০ হাত দূরে ঘটেছে। পরে তিনি লোকমুখে জানতে পেরেছেন।