ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার অনুপা (৪৪) নামের এক হতদরিদ্র নারীকে নিরুদ্দেশ দেখিয়ে সরকারের ভিডব্লিউবির উপকারভোগীর তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়া হয়েছিল। সেই নারীকে নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে সচিত্র একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আজ বুধবার তাঁকে চলতি বছরের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের মোট ৯০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া আজ বুধবার অনুপাকে ইউপিতে ডেকে নিয়ে তাঁর হাতে বরাদ্দ তিন বস্তা (৯০ কেজি) চাল তুলে দেন। এ সময় ইউপির সংশ্লিষ্ট লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
অনুপা তাঁর চরম দুঃসময়ে ৯০ কেজি চাল হাতে পেয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আফনেরা আমারে একটা ব্যবস্থা কইরা দিছুইন। আফনেরার সবার বালা অউক।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুপা নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের লংপুর গ্রামের মৃত আহাদুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি সরকারের ভিডব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট, সাবেক ভিজিডি) দুই বছর মেয়াদি কার্যক্রমের ২০২৩-২৪ তালিকাভুক্ত একজন উপকারভোগী ছিলেন। অনলাইনভিত্তিক তালিকার ২৪ নম্বর ক্রমিকে তাঁর নাম রয়েছে। ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের কার্ড পাওয়ার পর উপকারভোগী হিসেবে তিনি গত ৯ মাসে ২৭০ কেজি (প্রতি মাসে ৩০ কেজি) চাল ইউপি থেকে বরাদ্দ পেয়েছেন।
অনুপা বলেন, প্রকল্প চলমান থাকা অবস্থায় গত মার্চের বরাদ্দ বিতরণ করে তাঁর নাম কেটে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি তাঁর কাছ থেকে কার্ডটি রেখে দেয় ইউপি কর্তৃপক্ষ। কী কারণে নাম কাটা হয়েছে, সে সম্পর্কে জানতে চেয়ে ইউপি কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার গেছেন। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাননি।
অনুপার স্বামী নেই। তিনি একজন দুস্থ নারী। স্বামীর ভিটা ছাড়া তাঁর আর কোনো সম্পদ নেই। তাঁর দুই ছেলে রয়েছে। তাঁরা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। সরকারি সহায়তা প্রকল্প থেকে নাম বাদ যাওয়ায় এখন খুব কষ্টে দিন যাপন করছিলেন অনুপা। পেটের দায়ে কখনো কখনো বাবার বাড়িতে গিয়েছিলেন, তবে কখনো তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন না।
নান্দাইল উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. রাশিদা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর দপ্তরে এসেছিলেন। তাঁকে বলে দিয়েছি অনুপার কার্ড ফেরত ও তাঁর পাওনা বরাদ্দ দিয়ে দেওয়ার জন্য।’
এ বিষয়ে চণ্ডীপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, অনুপাকে আজ বুধবার ৯০ কেজি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুপা প্রতি মাসের বরাদ্দ পাবেন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘হতদরিদ্র নারীকে নিরুদ্দেশ দেখিয়ে উপকারভোগীর তালিকা থেকে নাম কাটার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।