কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহতের ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘হট্টগোল’ না করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। গতকাল বুধবার রাতে নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা জানাতে গিয়ে এ আহ্বান জানান। মাহবুব উল আলম কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য।
গত বুধবার (২ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলা খাদ্যগুদাম এলাকায় পূর্ববিরোধের জেরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকসহ (৩৭) তিনজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে গুরুতর আহত করা হয়। তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার বিকেলে সঞ্জয়কে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা ভেড়ামারা শহরের ডাকবাংলোর সামনে জড়ো হন। এরপর হামলায় অভিযুক্ত যুবজোট নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ও তাঁর আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
গতকাল রাত ১১টার দিকে ঢাকা থেকে সঞ্জয়ের লাশ ভেড়ামারা শহরে গোডাউনমোড় এলাকায় বাড়িতে পৌঁছায়। রাতেই লাশ দেখতে ভিড় করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ভেড়ামারায় যান। তিনি সঞ্জয়ের বাবা দুলাল প্রামাণিককে সান্ত্বনা দেন।
এরপর হ্যান্ডমাইকে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মাহবুব উল আলম বলেন, ‘সকালে লাশ সৎকার করে প্রার্থনা করতে হবে এবং একটা প্রতিবাদ সভা করতে হবে। এই প্রতিবাদ সভায় প্রশাসনকে আলটিমেটাম দিতে হবে, যাতে দ্রুত এ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত যাঁরা, তাঁদের আইনের আওতায় এনে বিচারকাজ শুরু করা হয়। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে এর বিচার করব।’
কাউকে আর হট্টগোল না করার আহ্বান জানিয়েছে মাহবুব উল আলম বলেন, ‘কেউ আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না। কেউ আমরা কোনো হট্টগোল করব না। ইনশা আল্লাহ, এর বিচার হবে। আমি কুষ্টিয়াতে আছি। যেকোনো বিষয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। সবার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। যেকোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।’
এ সময় সেখানে ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সঞ্জয়ের ছোট ভাই সম্পদ কুমার প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে স্থানীয় শ্মশানে সঞ্জয় কুমারের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলার ঘটনায় গত শুক্রবার সঞ্জয়ের স্ত্রী বীথি রানী দে বাদী হয়ে যুবজোট নেতা মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ভেড়ামারা থানায় মামলা করেন। মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি মোস্তাফিজুরসহ পাঁচজন বর্তমানে কারাগারে আছেন। অন্যরা জামিন নিয়েছেন।