চট্টগ্রাম জেলার মানচিত্র
চট্টগ্রাম জেলার মানচিত্র

সাপ দেখে আতঙ্কিত শিক্ষিকা, রাসেলস ভাইপার সন্দেহে ‘ঘর গিন্নিকে’ হত্যা

চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে নিরীহ নির্বিষ সাপ পিটিয়ে মারছে লোকজন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মিউনিসিপ্যাল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজ রোববার সকালে একটি নির্বিষ ঘরগিন্নি সাপকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এর আগে গতকাল লোহাগাড়ায় একটি অজগরকে পিটিয়ে মারা হয়।

এভাবে সাপ মারা পড়লে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরোনো ছবি বা ভিডিও দিয়ে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরির কারণে সাপ নিধনের ঘটনা বেড়েছে বলে তাঁরা জানান। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখন পর্যন্ত রাসেলস ভাইপারের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলেও সাপ নিয়ে গবেষণায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

তারপরও আতঙ্ক ছড়ানো এবং সাপ নিধন থেমে নেই। চট্টগ্রামের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রফিকুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ মিউনিসিপ্যাল স্কুল এলাকা থেকে আমাকে একটা ছবি পাঠানো হয়। দেখলাম সেটা ঘরগিন্নি সাপ। নির্বিষ সাপটি মেরে ফেলা হয়। এ ছাড়া লোহাগাড়ায় আগের দিন একটা অজগর পিটিয়ে মারা হয়। এভাবে যদি সাপ মারতে থাকে, তাহলে তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে।’

মিউনিসিপ্যাল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শম্পা রক্ষিত বলেন, স্কুল এখন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু স্কুলে শিক্ষক প্রশিক্ষণ চলছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এক শিক্ষিকা শৌচাগারে সাপটি দেখতে পান। পরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সবাই। এরপর সেটাকে মেরে ফেলা হয়।

পরে বিষয়টি বন বিভাগ ও সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়। এ দুই দপ্তরের লোকজন সেখানে যান। তাঁরা আশপাশে আর সাপ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখেন।

ডিএফও রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে চন্দ্রবোড়া এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তারপরও মানুষ পুরোনো ভিডিও–ছবি দিয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে। এ কারণে নির্বিষ সাপ, যেগুলো বাস্তসংস্থানের জন্য দরকার সেগুলোও মেরে ফেলা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সাপের বিষ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ভেনম রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে চন্দ্রবোড়া সাপ নেই। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপ ধরে এনে সেগুলোর বিষ দিয়ে অ্যান্টিভেনম তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে চন্দ্রবোড়া থাকলেও তা অন্য অঞ্চল থেকে ধরে আনা বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

ভেনম সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত গবেষক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, এদিকে রাসেলস ভাইপার নেই। সে কারণে রোগীও স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু আতঙ্কের কারণে মানুষের সঙ্গে সাপের একটি বৈরী ভাব তৈরি হয়েছে। যার কারণে সাপ পিটিয়ে মারা হচ্ছে। এটা পরিবেশের জন্য ভালো নয়।  

গত ১১ বছরে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপ ৩২টি জেলায় দেখা গেছে। বিশেষ করে পদ্মা অববাহিকা এলাকাগুলোতে সাপটি বেশি দেখা গেছে।