কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে বিএনপির কর্মিসভার চার দিন আগে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তিতুমীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার একটি পুরোনো মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামী শনিবার অষ্টগ্রামে গণসংযোগ ও কর্মিসভা করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। এর আগে ছাত্রদলের নেতাকে গ্রেপ্তারে নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তারের আতঙ্ক কাজ করছে।
বিএনপির অভিযোগ, তিতুমীর হোসেনের গ্রেপ্তার পুলিশের পক্ষ থেকে কর্মিসভায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির একটি বার্তা। তবে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা নেই বলে দাবি পুলিশের।
অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের আগে তিতুমীরকে গ্রেপ্তার করা জরুরি হয়ে পড়ার কারণ কারও অজানা নয়। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই গ্রেপ্তার করা হলো। এই গ্রেপ্তার ফজলুর রহমানের সভায় প্রভাব ফেললেও সভা থেকে আমরা দূরে সরে আসব না।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনটি জেলার হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা নিয়ে গঠিত। এই আসন থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ফজলুর রহমান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হয়ে হেরে যান। সে সময় ফজলুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ। এর আগে এই আসন আবদুল হামিদের সঙ্গে তাঁর দুবার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। দুটিতেই হেরে যান।
ফজলুর রহমানের বাড়ি ইটনা উপজেলায়। ঈদ উদ্যাপন ও নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করতে তিনি এখন গ্রামের বাড়িতে আছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা হয়। ওই সভা শেষে বেলা দেড়টার দিকে কার্যালয় থেকে বের হয়ে সামনে এগোতেই তিতুমীর হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। প্রস্তুতি সভা শেষে একটি মিছিল হওয়ার কথা ছিল। তবে তিতুমীরের গ্রেপ্তারের খবরে সেটি আর হয়নি। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র রাত যাপন করেন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত রোজার ঈদে ইচ্ছা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির আশঙ্কায় গ্রামে আসিনি। এতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী আমার প্রতি নাখোশ হন। অনেক দিন পর কোরবানির ঈদ করতে গ্রামে এলাম। কিন্তু এসে পরিস্থিতি ভালো ঠেকছে না। তিতুমীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বার্তা দেওয়া হলো। সেই বার্তা আমার পক্ষে নয়, আমার সভার বিপক্ষে যাবে।’ তাঁর মতে, প্রতিবারই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে।
বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের এমন দাবি অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, গতকাল একজনের গ্রেপ্তার হওয়ার কথা শুনেছেন। কিন্তু কে হয়েছেন কিংবা কেন হয়েছেন, কোনোটিই তাঁর জানা নেই। শনিবারের বিএনপির সভার কথাও তাঁর ভালো করে জানা নেই।
উপজেলা ছাত্রদলের নেতার গ্রেপ্তারের বিষয়ে অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান প্রথম আলোকে বলেন, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা চালানোর অভিযোগে একটি মামলার অভিযুক্ত হিসেবে তাঁকে আগে থেকেই গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এই গ্রেপ্তারের সঙ্গে অন্য কোনো বিষয় নেই বলে দাবি ওসির।