সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি ও উজানের ঢলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। আজ বুধবার সকালে শহরের ষোলঘর এলাকায়
সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বৃষ্টি ও উজানের ঢলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। আজ বুধবার সকালে শহরের ষোলঘর এলাকায়

সুনামগঞ্জে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

সুনামগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টি কম হলেও আজ বুধবার ভোর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে নামছে উজানের পাহাড়ি ঢল। এতে জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

জেলা শহর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা নদীর তীরবর্তী কোনো কোনো স্থানে রাতে সামান্য পানি কমলেও সকালের বৃষ্টিতে আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

পুরো জেলা বন্যাকবলিত হলেও সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বেশি আক্রান্ত। ছাতক উপজেলার সব ইউনিয়ন ও পৌরসভা প্লাবিত। শহরের পুরোটাই বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। সদর উপজেলার দেখার হাওরে পানি বেড়ে যাওয়ায় রাতে অনেক ঘরবাড়িতে নতুন করে পানি উঠেছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে মানুষের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকছে।

গতকাল রাত থেকে জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই, মধ্যনগর উপজেলায় পানি বেড়েছে। এসব উপজেলায় রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ছাতক-সিলেট সড়ক, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়ক, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়ক, সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সড়কগুলো দিয়ে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার পর্যন্ত ভালোই ছিলাম। কিন্তু এখন তো পানি বাড়ছে। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে পড়ছে। ৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।’

ছাতকের ইউএনও গোলাম মুস্তাফা জানিয়েছেন, উন্নতি বলার মতো অবস্থা এখনো হয়নি। গতকাল রাতে পানি স্থিতিশীল ছিল। আজ সকালে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। উপজেলার সবখানেই পানি। এই উপজেলায় ৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা ও রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আছে। এই উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের তোড়ে শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউএনও নেহের নিগার বলেন, ‘আমরা মানুষের পাশে আছি। যেখানে যা দরকার, সেটি করার চেষ্টা করছি।’

এদিকে সুনামগঞ্জ শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি অল্প কিছুটা কমলেও শহরের বেশির ভাগ এলাকাই বন্যাকবলিত। অনেক রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িতে বন্যার পানি আছে। শহরের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বন্যার্ত মানুষেরা আশ্রয় নিয়েছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। আজ সকালেও মানুষের ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি দেখা যায়। শহরের ষোলঘর, নবীনগর, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, ফিরোজপুর, উকিলপাড়া, মুক্তারপাড়া, হাজীপাড়া, আরপিননগর, পশ্চিমবাজার, নতুনপাড়া, কালীপুর সময়বায় সুপার মার্কেট, মধ্যবাজার, পশ্চিমবাজার এলাকায়ও বন্যার পানি আছে। এসব এলাকায় অনেক দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে।

ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা রুবেল পাল বলেন, সকালে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবার পানি বাড়ছে। মানুষ কষ্টে আছে।

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন জানান, তাঁর এলাকায়ও পানি বাড়ছে। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি আজ সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ছাতক উপজেলা সদরে সুরমা নদীর পানি ১৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা) বৃষ্টি হয়েছে ১০০ মিলিমিটার। তবে এখানে বৃষ্টি কম হলেও সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামছে সুনামগঞ্জে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, সুরমা নদীর পানি কোনো কোনো স্থানে সামান্য কমেছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী, অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাই পানি আরও বাড়তে পারে। যদি উজানে বেশি বৃষ্টি হয়, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার, রান্না করা খাবার বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’