উখিয়ায় ৪ রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ, আশ্রয়শিবিরে এপিবিএনের অভিযান

উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে গোলাগুলির ঘটনার পর গতকাল রাতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যদের অভিযান
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাসীদের হামলায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। ঘটনায় জড়িত কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে অভিযান চালাচ্ছে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এর আগে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮) বি-৬৪ ব্লকের খালপাড় এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে।

রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, গতকাল বিকেলে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা এ হামলা চালিয়েছেন। গোলাগুলির ঘটনার পর থেকে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গারা হলেন ক্যাম্প-৮–এর বি-৩৫ ব্লকের বসিন্দা মো. আলমের ছেলে মোহাম্মদ সালাম (৩২), বি-৫৪ ব্লকের বাসিন্দা আবদুল খালেকের ছেলে মো. শফি (৬৩), বি-৫০ ব্লকের বাসিন্দা আবদুস সামাদের ছেলে মো. শরীফ (৫৫) ও বি-৫৫ ব্লকের বাসিন্দা ইমাম হোসেনের ছেলে মো. নাসের (১২)। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও অন্য দুজন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

উখিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত চার রোহিঙ্গার মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করা সম্ভব হয়নি। তবে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতাদের ভাষ্য, হামলাকারীরা আরসার সক্রিয় সদস্য এবং পাশের বালুখালী (ক্যাম্প-৭) আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। গতকাল বিকেল চারটার দিকে ক্যাম্প-৭ থেকে বের হয়ে ১৮ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র একটি দল ক্যাম্প-৮–এর খালপাড় এলাকায় এসে নবী হোসেন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য সালামকে গুলি করে। সালামের পিঠে গুলি লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কে ছুটাছুটি শুরু করেন। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। এ সময় গুলিতে আরও তিন রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হন। খবর পেয়ে এপিবিএনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে আরসা সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পাশের ক্যাম্প-৭–এর দিকে চলে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আরসার সঙ্গে নবী হোসেন বাহিনীর দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। হামলাকারীদের অনেকের মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। হামলাকারীদের হাতে ছিল দেশীয় লম্বা বন্দুক। আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করছেন রোহিঙ্গা নেতারা।

৮ এপিবিএনের মুখপাত্র ও সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতকারী দুই রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে চার রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হচ্ছে। আশ্রয়শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইন্টেনসিভ পেট্রোলিং ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, গত চার মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন আরসা সদস্য, সাতজন রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি) ও অন্য তিনজন সাধারণ রোহিঙ্গা নাগরিক। সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে এপিবিএনের সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এপিবিএন পাঁচজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে।