কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের ওপর ছোড়া গুলিতে নিহত নির্মাণশ্রমিক নুর আলমের কবরের পাশে স্বজনেরা। শুক্রবার বিকেলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামে
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের ওপর ছোড়া গুলিতে নিহত নির্মাণশ্রমিক নুর আলমের কবরের পাশে স্বজনেরা। শুক্রবার বিকেলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামে

কাজে বেরিয়ে গুলিতে স্বামীর মৃত্যু, ‘আমার গর্ভের সন্তানের কী হবে’

২০ জুলাই সকাল আটটা। ঠিকাদারের ফোন পেয়ে গাজীপুরের চৌরাস্তা দিয়ে কাজে যাচ্ছিলেন নির্মাণশ্রমিক নুর আলম (২২)। সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী আসিফ ও আবদুল্লাহ। একপর্যায়ে তাঁরা কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলা শিক্ষার্থীদের মিছিলের মধ্যে পড়েন। শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে গুলি চালায় পুলিশ। সেই গুলি এসে নুর আলমের চোখে লেগে মাথার ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যায়। সহকর্মীরা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত নুর আলমের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের আমীর আলীর বড় ছেলে তিনি। এক বছর আগে বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী খাদিজা বেগম (১৯) আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

ঘটনার পর থেকে মোল্লাপাড়া গ্রামে মাতম চলছে। এর ছয় দিন পরেও পরিবারের বড় ছেলেকে হারিয়ে স্বজনদের কান্না থামেনি। তাঁরা নিরপরাধ নুর আলমের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

নিহত নুর আলমের স্ত্রী খাদিজা বেগম (১৯) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে আমি তাঁদের বিচার চাই। এখন আমার গর্ভের সন্তানের কী হবে?’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোল্লাপাড়া গ্রামের আমীর আলী সাত বছর থেকে সপরিবার গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকার তেলিপাড়া গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তিনি ভ্যান চালান। তাঁর বড় ছেলে নুর আলম ২০ জুলাই সকাল আটটার দিকে চৌরাস্তায় কাজের জন্য বাসা থেকে বের হন। পথে কোটা আন্দোলনের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। তাঁর চোখে গুলি লাগলে মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এ সময় সহকর্মী আসিফ ও আবদুল্লাহ তাঁকে উদ্ধার করে নিকটস্থ সেবা হাসপাতালে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে নুর আলমের বাবা আমীর আলী ওই হাসপাতালে যান। তিনি ছেলের অবস্থা দেখে বুঝতে পারেন ছেলে বেঁচে নেই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে জয়দেবপুর হাসপাতালে পাঠায়। ওই হাসপাতালে নেওয়ার পর নুর আলমকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

শুক্রবার নিহত নুর আলমের গ্রামের বাড়ি মোল্লাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। কবরের সামনে তাঁর বাবা আমীর আলী, মা নুর বানু ও দাদি আমেনা খাতুন কান্নাকাটি করছেন। সাংবাদিক দেখে এলাকাবাসী এগিয়ে আসেন।

নুর আলমের বাবা আমীর আলী বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো দল করে না। সে শ্রমিক মানুষ। সকালে কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিল। অথচ পুলিশ আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করল। আমি এর বিচার চাই।’

নুর আলমের মা নুর বানু প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার সকাল ৮টায় ঠিকাদারের ফোন পেয়ে নুর আলম বাসা থেকে বের হয়। এক ঘণ্টা পর পুলিশের গুলিতে নুর আলমের মৃত্যুর খবর পাই। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। পুলিশ আমার বুকের ধনকে কেড়ে নিল।’

কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘নুর আলম সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নাই। নুর আলমের গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশ পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়েছে বলে জেনেছি। যেহেতু ঘটনা ঢাকার, সেহেতু সেখানকার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভালো বলতে পারবে।’