বকেয়া বেতনের দাবিতে এপিএল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকায়
বকেয়া বেতনের দাবিতে এপিএল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকায়

গাজীপুরে মহাসড়ক আটকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মানুষের ভোগান্তি

বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন টি অ্যান্ড জেড গ্রুপের এপিএল অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে তাঁরা মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষ।

শিল্প পুলিশ, থানা-পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপিএল কারখানাটির অবস্থান গাজীপুর মহানগরীর মোগরখাল এলাকায়। গত মাসের শুরুতে এই কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন। কিন্তু মালিকপক্ষ বেতন দিতে অপারগতা জানিয়ে গতকাল সোমবার বেতন পরিশোধ করার কথা জানায়। এরপর শ্রমিকেরা আর আন্দোলন করেননি। তবে গতকাল বিকেলে বেতন দেয়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে রাতেই শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন এবং মহাসড়ক অবরোধ করেন। রাত ৯টার দিকে শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরে। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আবার ভোগড়া মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

কারখানার শ্রমিক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে কারখানা বন্ধ। কিন্তু বন্ধ হওয়ার আগে আমরা যে কাজ করেছি, সেই বেতন এখনো পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। ৩০ সেপ্টেম্বর বেতন দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সড়কে নামতে হয়েছে।’

শ্রমিকদের বিক্ষোভে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় দিকে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের ভোগড়া থেকে টাঙ্গাইলের দিকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এ দুই মহাসড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষ।

শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়

ভোগড়া এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শ্রমিকেরা বেতন পায় কারখানায়। সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করুক। সড়কে কেন?’

ঢাকার বনানী এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন গাজীপুরের বাসিন্দা কবির হোসেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিয়মিত গাজীপুর থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করি। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। পরে বাধ্য হয়ে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে উত্তরার আবদুল্লাহপুর গিয়ে বাসে উঠে অফিসে যাই।’

এদিকে নগরের কোনাবাড়ী এলাকার এম এম নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা টিফিন বিল, নাইট বিল ও হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে আজ সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছেন। গতকাল সোমবারও বিক্ষোভ করেছিলেন তাঁরা।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, এপিএল অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার মালিকের গতকাল শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। বেতন না দেওয়ায় শ্রমিকেরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন। শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জেলার ৯টি কারখানা বন্ধ আছে। এর মধ্যে ৪টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ১টি কারখানা লে-অফ, ১টি অস্থায়ী বন্ধ এবং ৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শিল্প পুলিশ জানায়, বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ ছাড়া গাজীপুরের ৯৮ শতাংশ পোশাক কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক আছে। পোশাক কারখানাগুলোয় কর্মীরা সকালে কাজে যোগ দিয়েছেন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে, পুরো জেলায় সব মিলিয়ে নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত কারখানা আছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এসব কারখানায় প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন।