ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় থানায় ফোন দিয়ে নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে আছিয়া আক্তার নামের এক কিশোরী। আজ রোববার ওই কিশোরী সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন দিয়ে বাল্যবিবাহের বিষয়টি জানালে তিনি বিয়ে বন্ধ করে দেন।
আছিয়া উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের দরগাগট্টি গ্রামের কৃষক আতিক মাতুব্বরের মেয়ে। সে স্থানীয় জয়ঝাপ উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে। এক বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে আছিয়া সবার বড়। আগামীকাল সোমবার তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
আছিয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলে, ‘আমার লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছা। এই অল্প বয়সে আমি বিয়ে করতে চাই না। কিন্তু আমার পরিবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে ঠিক করে। বিষয়টি আমি নিজে ওসি স্যারকে ফোনে জানালে তিনি আমার বিয়ে আটকে দেন।’
আছিয়ার বাবা আতিক মাতুব্বর বলেন, ‘আমি একজন দরিদ্র কৃষক। সংসারে অভাব। মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো আমার পক্ষে কঠিন। এদিকে ছেলেপক্ষ দুই-তিন আগে আছিয়া দেখে পছন্দ করে। তারা দ্রুত বিয়েটা সেরে ফেলার জন্য চাপ দিচ্ছিল। সংসারের অভাবের কথা ভেবে আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।’
আতিক মাতুব্বর আরও বলেন, আজ সকালে ওসি তাঁদের থানায় ডেকে নিয়ে বিয়ে বন্ধ করতে বলেন। মেয়ের বয়স ১৮ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকাও নিয়েছেন। দুপুরে তিনি বাড়িতে এসে মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবেন বলে জানান।
জয়ঝাপ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিরাজ আলী বলেন, আছিয়া তাঁর বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে ওসিকে ফোন দিয়ে তার বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছে। দুপুরে ওসি আছিয়াকে নিয়ে স্কুলে আসেন এবং আছিয়ার লেখাপড়ার খরচ বহন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সালথা থানার ওসি মো. শেখ সাদিক বলেন, ‘আছিয়া আজ সকালে ফোন দিয়ে বলে, “আমি লেখাপড়া করতে চাই। কিন্তু মা–বাবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে। কাল বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।” খবর শুনে প্রথমে একজন এসআইকে (উপপরিদর্শক) আছিয়ার বাড়িতে পাঠাই।’
ওসি শেখ সাদিক আরও বলেন, এসআই খোঁজখবর নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আছিয়াসহ তার পরিবারকে থানায় নিয়ে আসেন। পরে তাঁদের বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে ধারণা দেন এবং আছিয়াকে লেখাপড়া করে মানুষ হওয়ার সুযোগ দিতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এখন থেকে আছিয়ার লেখাপড়ার সব খরচ তিনি চালাবেন। তিনি সালথা থেকে বদলি হয়ে গেলেও যিনি আসবেন, তাঁর মাধ্যমে সব সময় খোঁজ রাখবেন বলে জানান।