ভেদরগঞ্জের সেই খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা বরখাস্ত, হিসাব সমন্বয়ের অভিযোগ ইউএনওর

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ
ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক ইকবাল মাহমুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আদেশে স্বাক্ষর করলেও আজ বৃহস্পতিবার আদেশের চিঠি শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে আসে।

এদিকে চাল আত্মসাতের ঘটনা তদন্তের সময় তদন্ত কমিটির সহায়তায় বাইরে থেকে ১৮ টন চাল এনে গুদামের হিসাব সমন্বয়ের অভিযোগ উঠেছে। ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) এমন একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। যদিও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে ১১ নভেম্বর গুদামে অভিযান চালান ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন। তখন একটি গুদামে চাল কম থাকার আলামত পান। ওই সময় তিনি পুলিশ নিয়ে ইকবাল মাহমুদের বাসভবনে অভিযান চালান। সেখানে ১৩টি বস্তায় ৫৯০ কেজি চাল পান।

এ ছাড়া ১ হাজার ১০০টি চালের খালি বস্তা পান, যাতে সরকারি সিল ছিল। ওই মালামাল অবৈধভাবে নিজের বাসভবনে মজুত করেছিলেন ইকবাল মাহমুদ। এ সময় কক্ষটি সিলগালা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বাসভবনে পাওয়া যাওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল

সূত্র আরও জানায়, ১২ নভেম্বর সিলগালা কক্ষের জানালার গ্রিল কেটে মালামাল সরানোর চেষ্টা করেন ইকবাল মাহমুদ। তখন তাঁকে হাতেনাতে ধরেন ইউএনও। পরে তাঁকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোশারফ হোসেনের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনা তদন্তে শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ নভেম্বর ইকবাল মাহমুদকে রাজবাড়ীর পাংশায় বদলি করা হয়।

শরীয়তপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ভেদরগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছিল, তা তদন্ত করা হয়েছে। তিনি সরকারি চাল অবৈধভাবে মজুত করেছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বাইরে থেকে চাল এনে সমন্বয়ের অভিযোগ

এদিকে ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করেছেন, খাদ্য বিভাগের তদন্ত কমিটির উপস্থিতি ও সহযোগিতায় ইকবাল মাহমুদ বাইরে থেকে ১৮ টন চাল এনে খাদ্যগুদামের হিসাব সমন্বয় করেছেন। এ অভিযোগের পর দুদকের মাদারীপুর কার্যালয়ের একটি দল তিন দফা ভেদরগঞ্জ খাদ্যগুদামে অভিযান চালায় এবং কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ইকবাল মাহমুদের বিরুদ্ধে সরকারি চাল আত্মসাৎ ও বিক্রির অভিযোগ ছিল। হাতেনাতে তিনি প্রমাণও পেয়েছেন। ওই ঘটনায় খাদ্য বিভাগের তিন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তের সময় একটি গুদামের ১৮ টন চাল বাইরে থেকে এনে হিসাব সমন্বয় করা হয়। ইকবাল মাহমুদের এমন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেন তদন্ত কমিটির তিন সদস্য। এসব অভিযোগ ও প্রমাণ দুদক কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামের এক কর্মকর্তার অনিয়মের বিষয়ে কিছু তথ্যপ্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। ওই সব তথ্যপ্রমাণ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি পেলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ইউএনও বাইরে থেকে চাল এনে গুদামের হিসাব সমন্বয়ের যে অভিযোগ দুদকে করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। এটা ভুল–বোঝাবুঝির অংশ। এরপরও ইউএনওর কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত কমিটির কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।