মমতাজ বেগমের অভিযোগ, কয়েকটি কেন্দ্রে কারচুপি করে তাঁকে পরাজিত করা হয়েছে

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে কর্মিসভায় ভোটে কারচুপির অভিযোগ করেন মানিকগঞ্জ-২ আসনে পরাজিত নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার পূর্ব ভাকুম গ্রামে তাঁর বাসভবনে
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর, হরিরামপুর ও সদরের একাংশ) আসনে পরাজিত নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগম অভিযোগ করেছেন, কয়েকটি কেন্দ্রে কারচুপি করে তাঁকে হারানো হয়েছে। তিনি বলেন, অধিকাংশ কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ হলেও সিঙ্গাইর উপজেলার বলধারা ও বায়রা ইউনিয়ন এবং সিঙ্গাইর পৌরসভার কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটে কারচুপি করা হয়েছে। কালোটাকা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (দেওয়ান জাহিদ আহমেদ) ভোট কিনেছেন। বলধারা ও বায়রা ইউনিয়নের কয়েকটি কেন্দ্রে মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের ভোটও ট্রাক প্রতীকে পড়েছে। এসব সিল মেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা। এসব কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অস্বাভাবিক ভোটের কারণে তাঁকে পরাজিত হতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান মমতাজ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই দিন পর আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিঙ্গাইরের পূর্ব ভাকুম এলাকায় নিজ বাসভবনে দলের কর্মিসভায় মমতাজ বেগম এসব অভিযোগ করেন। এই সভায় দলের পরাজিত অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মুশফিকুর রহমান খান, সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভায় সিঙ্গাইর পৌরসভার মেয়র আবু মোহাম্মদ নাঈম বাশার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী সেকেন্দারসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মমতাজ বেগম বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ (ট্রাক প্রতীক) জয়ী হওয়ার পর তাঁর অনুসারীরা নৌকার কর্মীসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে আসছেন। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ জন নৌকার কর্মী ও দলীয় লোকজনকে মারধর করা হয়েছে। এ ছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমি কিন্তু ঘরে বসে থাকার মহিলা নই, সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ানো মানুষ আমি। আমার নেতা-কর্মী বা লোকজনের কিছু হলে ছাড় দেওয়া হবে না। যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদের টাকা নিয়ে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধ করা হয়েছে।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেওয়ান জাহিদ আহমেদ। তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, তাঁর কর্মীরা কাউকে মারধর করেননি। মমতাজের অনুসারীরাই তাঁর লোকজনকে মারধর করেছেন।

সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ বেগম ২০০৮ সালে প্রথমবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মানিকগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে ৮২ হাজার ১৩৮ ভোট পেয়েছেন। মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।