মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের ডাকে আয়োজিত বর্ধিত সভায় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের প্রশংসা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ ফরাজি। এ সময় সভায় হট্টগোল করতে থাকেন আবদুস সোবহানের সমর্থকেরা। তাঁর বিরুদ্ধে নানা স্লোগানও দিতে থাকেন তাঁরা।
কালকিনি পৌরসভার সামনে গতকাল বর্ধিত সভাটি হয়। সভায় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ ফরাজি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘কালকিনিতে নির্বাচন করছেন দুজন (তাহমিনা বেগম ও আবদুস সোবহান গোলাপ)। দুজনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়নের মণি।’ তাঁর এ বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে সভায় হট্টগোল এবং তাঁর বিরুদ্ধে নানা স্লোগান শুরু হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য।
সভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনির চৌধুরীসহ নেতা-কর্মীদের সামনেই হট্টগোল শুরু হলে সিরাজ ফরাজি বক্তব্য না দিয়ে মঞ্চ ছাড়েন।
জানতে চাইলে সিরাজ ফরাজি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বলতে চাইছি, দুজনই প্রধানমন্ত্রীর দুই নয়ন। নেত্রী এখানে জনসভা করবেন মানে কী? গোলাপকে জেতাতে হবে। নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। আর আমাদের দায়িত্ব কী? নৌকাকে জেতানো। এই কথা বলতে চাইছিলাম। কিন্তু আপত্তিকর কথা আর স্লোগান দেওয়ায় আমি বক্তব্য শেষ না করেই ওই স্থান ত্যাগ করি।’
দলীয় নেতা-কর্মী সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভা হওয়ার কথা। এ জনসভা উপলক্ষে গতকাল দুপুরে কালকিনি পৌরসভার সামনে খোলা স্থানে মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ একটি বর্ধিত সভা ডাকেন। এ সভায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল ও নৌকার বিজয় আনতে নানা বিষয় ধরে আলোচন হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র ওই নেতাকে (সিরাজ ফরাজি) অপমান ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা করেন গোলাপের সমর্থকেরা।’
বর্ধিত সভাটি কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে করা হলেও উপজেলা কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্ধিত সভা হলে হবে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। কিন্তু আজ বর্ধিত সভা হলো কালকিনি পৌরসভার মাঠে। এখানে যারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নাম দিয়ে আয়োজন করেছেন, তাঁরা দলীয় গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে নাম দিয়েছেন। আসলে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে কোনো বর্ধিত সভা হয়নি। গোলাপ সাহেবের ডাকা ওই বর্ধিত সভা।’
মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। তাহমিনা বেগম কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।