রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিভাগের সভাপতিসহ শিক্ষকদের একটি পক্ষ। উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে তারা ওই অধ্যাপকের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তবে এই অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে উপাচার্যের কাছে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছে শিক্ষকদের আরেকটি পক্ষ। তারা বিভাগের স্বার্থে উপাচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ ইতিমধ্যে লিগ্যাল সেলে পাঠানে হয়েছে। সেখান থেকে যৌন হয়রানির সেলে যাবে। পরে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মাহবুবা কানিজ গত মঙ্গলবার উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। একই দিন একই দাবিতে বিভাগের ৯ শিক্ষক এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলা শাখা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি উপাচার্য বরাবর পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দেয়। এর পরদিন গতকাল বুধবার বিভাগের সাতজন শিক্ষক পাল্টা একটি অভিযোগ উপাচার্যের কাছে দেন।
লিখিত অভিযোগে মাহবুবা কানিজ উল্লেখ করেন, গত রোববার দুপুরে বিভাগীয় সভাপতির অফিসকক্ষে ওই অধ্যাপক বিভাগের এক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে অশোভন ভাষা ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করেন। এরপর মঙ্গলবার একাডেমিক কমিটির সভা হয়। সভা শেষে বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে মাহবুবা কানিজ ওই শিক্ষকের সঙ্গে সেদিন যে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করেছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য ওই অধ্যাপককে বলেন। এতে তিনি আবারও অশোভন আচরণ করে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন।
এদিকে গতকাল বিভাগের সাত শিক্ষক উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়ে দাবি করেন, ৯ শিক্ষকের দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখিত ঘটনা সত্য নয়। অভিযোগে তাঁরা উল্লেখ করেন, বিভাগের অভ্যন্তরে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বিভাগের অভ্যন্তরীণ ঘটনা বিভাগেই নিরসন হওয়া উচিত। বিভাগের পঠন-পাঠনের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে তাঁরা উপাচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি মাহবুবা কানিজ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের এমন আচরণ কখনোই কাম্য নয়। তিনি নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন। যৌন হয়রানির প্রচলিত আইন অনুযায়ী আমরা তাঁর শাস্তি চাই।’ অন্য সাত শিক্ষকের পাল্টা অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কে বা কারা ওই শিক্ষকের পক্ষে অভিযোগ দিয়েছেন, সে বিষয়ে আমার জানা নেই। যাঁরা পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন, তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও ওই শিক্ষকের মতো। আমরা নারীরা কর্মক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তা চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যৌন হয়রানির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন ওই অধ্যাপক। বিভাগীয় সমিতির কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের সভা ডাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আলোচনায় বসলে আমিও অন্যদের ভুলগুলো তুলে ধরব।’
উপাচার্যের কাছে শিক্ষকদের দুটি পক্ষের চিঠিতেই স্বাক্ষর রয়েছে সহযোগী অধ্যাপক আশিক শাহরিয়ারের। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার আমি একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম না। পরে সভাপতি ম্যাম ঘটনাটি জানালে আমি ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করি। তবে বিভাগের অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, বিষয়টি যেভাবে আমাকে বলা হয়েছে, আসলে সেটি তেমন নয়। তাই আমি পরবর্তী সময়ে ম্যামকে আমার অবস্থানের কথা জানিয়েছি। একই সঙ্গে আমরা কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি সমাধানে উপাচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠি দিয়েছি।’