কেউ দেয়াল ঘষে পরিষ্কার করছেন, কেউবা সেখানে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। কেউবা সেই প্রলেপ দেওয়া জায়গায় আঁকছেন লাল-সবুজের পতাকা। কেউ আবার ব্যস্ত স্লোগান লেখায়। শত শত শিক্ষার্থীর এ রকম ব্যস্ততা নগরের আপার যশোর রোডের রেলস্টেশনের দেয়ালে। রেলস্টেশনে যাওয়ার প্রধান ফটক থেকে শিববাড়ী মোড় পর্যন্ত আধা কিলোমিটার দীর্ঘ ওই দেয়াল রংতুলির আঁচড়ে বর্ণিল হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের ২০ থেকে ২৫টি ছোট ছোট দল সেখানে এই আঁকাআঁকির কাজ করছে।
শনিবার বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত দেয়ালে দেয়ালে আঁকিবুঁকির কাজ চলে। যেখানে বাংলায় স্লোগান যেমন লেখা হয়েছে, তেমনি আছে ইংরেজিতে লেখা স্লোগান। আছে ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিও। প্রতিবাদী আর রূপক চিত্রের পাশাপাশি আছে ফুল ও প্রজাপতির চিত্র। ব্রিদ্রোহী গানের পাশে আছে জেনারেশন জেডের প্রশংসা, ২৪ এর গল্পের পাশে বায়ান্নর ইতিহাসও আছে। নজরুলের গানের কথার পাশাপাশি আছে জালাল উদ্দীন রুমীর বিখ্যাত উক্তি। ব্রিদোহী স্লোগানের পাশাপাশি আছে সম্প্রীতির আহ্বান।
দেয়ালজুড়ে- ‘আমরা স্বাধীন’, ’পাহারায় থাকতে হবে, দুর্নীতিকে রুখতে হবে’, ’সন্ত্রাস, মাদক, সিন্ডিকেট, সুদ, ঘুষ, হয়রানি ,জুলুমমুক্ত বাংলা চাই’, ’স্বাধীন হয়েছি, সময় এখন সভ্য হওয়ার’, —এ রকম স্লোগান লেখা হচ্ছে।
দেয়ালজুড়ে- ‘আমরা স্বাধীন’, ’পাহারায় থাকতে হবে, দুর্নীতিকে রুখতে হবে’, ’সন্ত্রাস, মাদক, সিন্ডিকেট, সুদ, ঘুষ, হয়রানি ,জুলুমমুক্ত বাংলা চাই’, ’স্বাধীন হয়েছি, সময় এখন সভ্য হওয়ার’, ’এসেছে ফাগুন আমরা হয়েছি শত গুণ’, ’২৪ এর গল্প’, ’আমি নয় আমরা’, ’পানি লাগবে পানি’, ’একজন ভিআইপির জন্য পৃথিবী থেমে থাকতে পারে না’, ’হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, উই আর ওয়ান’—এ রকম স্লোগান লেখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এই কাজে যোগ দিয়েছেন জনতাও।
দেয়ালের একটা অংশে ‘ছিঁড়ে যাবে অন্যায়ের শিকল, উড়ে যবে পাখির দল’— পেনসিলে এ রকম একটা লেখার ওপর রং করছিলেন মাঝবয়সী ফজলুল বারী মল্লিক। তিনি নিজেকে রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পরিচয় দেন। ফজলুল বারী বলেন, ওরা দ্রুত লিখতে পারছিল না, তাই একটু সহযোগিতা করছি। ভালো লাগা থেকে এ রকম বাইরের অনেকেই এখানে সহায়তা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা কেসিসি উইমেন্স কলেজের আফিফা আমিনুল এবং সিটি কলেজের সামিয়া তাসমিম তাঁদের সাত বন্ধুকে নিয়ে সকাল ১০টা থেকে দেয়ালে আঁকার কাজ করছেন। আফিফা ও সামিয়া বলেন, ‘আমাদের প্রতিবাদের কথাগুলো লিখছি, বাংলাদেশের পতাকা আঁকছি; সেখানে আমাদের সবার হাতের ছাপ দিয়েছি, মানে আমরা বাংলাদেশ। ১৬ বছরের দুঃশাসন থেকে মুক্তির প্রতীকী ছবি এঁকেছি। আমাদের আন্দোলনে তো শুধু আমরাই ছিলাম না, আমাদের সঙ্গে জনগণও ছিল, তাই খণ্ড চিত্রের মাধ্যমে এই সবার আন্দোলনটা ফুটিয়ে তোলার কাজ এখন শুরু করছি।’
আফিফারা যেখানে কাজ করছিলেন, তার কিছুটা দূরে চলছিল ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি আঁকার কাজ। সেখানে কাজ করা নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব হাসান বলেন, ছোট ছোট দল বেঁধে সবার মতো করছে। পাশাপাশি তবু বিভিন্ন কিছু আঁকা হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে কে কতটুকু জায়গায় আঁকবে, তা ঠিক করে নেওয়া হয়েছে।
শুধু ওই দেয়ালেই না নগরের শিববাড়ী মোড় এলাকার কেডিএ অ্যাভিনিউ এলাকার দেয়ালেও চলছে গ্রাফিতিসহ নানা ধরনের আকাঁআঁকির কাজ। নগরের শহীদ হাদিস পার্কের দেয়ালেও চলছে এই কাজ।
নগর ভবনের সামনে শহীদ হাদিস পার্কের দেয়ালে জনা দশেক শিক্ষার্থী কাজ করছেন। ওই দেয়ালে লেখা সিটি করপোরেশনের ও রোটারি ক্লাবের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নীতিবাক্য লেখা রয়েছে। সেসব লেখার ওপর নানা ধরনের পোস্টারও সাঁটানো। শিক্ষার্থী সেগুলো ঘষেমেজে পরিষ্কার করছেন। তাঁদের কেউ পরিষ্কার করা জায়গায় রং করে আঁকার কাজ করছেন।
খুলনার তরুণদের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্ল্যাটফর্মের তরুণেরা একত্র হয়ে সেখানকার কাজগুলো করছেন। তাঁদের প্রধান সমন্বয়ক রেদোয়ানুল রুহান প্রথম আলাকে বলেন, ‘তরুণদের অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম একত্র হয়ে আমরা “পরিকল্পিত খুলনা ফোরাম” গঠন করেছি। আমরা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম। সমতা ও মানবিকতার বাংলাদেশ বাস্তবায়িত করার জন্য আমরা কাজ করছি।’
এদিকে আজও খুলনায় শিক্ষার্থীরা সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে যাচ্ছেন।