সুনামগঞ্জে ব্যবসা করার জন্য এক সুদ কারবারির কাছ থেকে সুদে এক লাখ টাকা এনেছিলেন তিনি। এটা বছর তিনেক আগের কথা। এই সময়ে সুদ হিসেবে সাড়ে তিন লাখ সুদ কারবারিকে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আরও টাকা চাওয়ায় মানসিক চাপে ওই ব্যক্তি ফেসবুকে সুইসাইড নোট পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা বালিজুরী ইউনিয়নের পাতারি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের একটি বটগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়।
মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম ফয়সল আহমদ সৌরভ (২৫)। এর আগে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে তাঁর মৃত্যুর জন্য দুজনকে দায়ী করেন। ফয়সল আহমদের বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা বালিজুরী ইউনিয়নের পাতারি গ্রামে। তাঁর স্ত্রী ও চার মাস বয়সী এক মেয়ে আছে।
গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন ফয়সল। তাতে তিনি লিখেন, ‘আমি গলায় দড়ি দিলাম তুই রফিকের লাগি। আমাকে কাবু করে লাশ বানাইলি তুই। ভালো থাক বেইমান। সফিকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা সুদে আনছিলাম, তিন লাখ টাকা দেওয়ার পরও এখনো সাড়ে তিন লাখ টাকা পায়। এই রফিক আর সফিকের লাগি আত্মহত্যা করলাম।’
ফয়সল আহমদের পরিবার থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফয়সল আহমদ বালু-পাথরের ব্যবসা করতেন। বছর তিনেক আগে উপজেলার একই ইউনিয়নের আনোয়ারপুর গ্রামের সফিক মিয়ার (৩৮) কাছ থেকে এক লাখ টাকা সুদে এনেছিলেন। এ পর্যন্ত তিনি তিন লাখ টাকা দিয়েছেন। সফিকের দাবি, তাঁকে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা দিতে হবে। এ জন্য ফয়সলকে চাপ দিচ্ছিলেন। রফিক মিয়ার (৪৫) বাড়ি একই উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামে। তাঁর সঙ্গে ফয়সলের ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। গতকাল সফিক ও রফিক একসঙ্গে আরও কয়েকজনকে নিয়ে টাকার জন্য ফয়সলকে চাপ দেন। এ সময় তাঁকে গালিগালাজ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে রফিক মিয়া ফয়সলের একটি পাথরবোঝাই নৌকা আটকে রাখেন।
সন্ধ্যায় ফয়সলের ফেসবুক পোস্ট দেখে সবাই তাঁকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে গ্রামের পশ্চিম পাশের একটি বটগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
ফয়সলের বাবা আজিজুর রহমান বলেন, ‘এক লাখ টাকায় তিন লাখ টাকা দেওয়ার পরও সফিক টাকার জন্য ফয়সলকে চাপ দিত। নানাভাবে হুমকি দিত। সফিক ও রফিকের চাপেই আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে সফিক মিয়ার মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর সফিক ও রফিক এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলী নেওয়াজ বলেন, ‘ফয়সল খুবই ভালো ছেলে ছিল। টাকার বিষয়টি পরিবারকেও সে জানায়নি। টাকার চাপ সইতে না পেরেই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।’
এ ব্যাপারে তাহিরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা প্রথম আলোকে, ফয়সল আহমদের পরিবার থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।