শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থেকে গত শুক্রবার বাড়ি ছাড়ে তিন এসএসসি পরীক্ষার্থী। সহপাঠী ওই তিনজনের দুজন কিশোরী ও একজন কিশোর। সঙ্গে ছিলেন কিশোরের বন্ধু এক তরুণ। তারা গত রোববার কুয়াকাটায় বেড়াতে যায়। ওঠে কুয়াকাটার রোজ গার্ডেন হোটেলে। হোটেল ভাড়া নিতে তারা স্বামী–স্ত্রীর পরিচয় দেয়। এদের মধ্যে ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার কুয়াকাটার মহিপুর থানা–পুলিশ এসব তথ্য জানায়। এ ঘটনায় দুপুরে নিহত কিশোরীর নানা বাদী হয়ে মহিপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। ওই তিন এসএসসি পরীক্ষার্থী শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
মামলায় নিহত কিশোরীর সহপাঠী রায়হান, তার বন্ধু রিফাত হোসেন (২৬) ও হোটেলের ব্যবস্থাপক ইমনকে আসামি করা হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধারের সময় রায়হান, রিফাত, ইমন ও নিহত কিশোরীর অন্য সহপাঠীকে আটক করেছিল। মামলার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। অন্য কিশোরী পুলিশের হেফাজতে আছে।
পুলিশ জানায়, রোববার বিকেলে স্বামী–স্ত্রী পরিচয় দিয়ে কুয়াকাটার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হোটেল রোজ গার্ডেনের দুটি কক্ষ ভাড়া নেয় তারা। হোটেলের ডি-৩ কক্ষে রায়হান ও নিহত কিশোরী এবং ডি-২ কক্ষে রিফাত ও অন্য কিশোরী ছিল। গতকাল সকালে নিহত কিশোরীর সঙ্গে রায়হানের কথা–কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে হোটেলের কক্ষ থেকে ওই কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।
ভেদরগঞ্জ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কুয়াকাটায় হোটেল থেকে যে কিশোরীর লাশ উদ্ধার হয়েছে, সে তাঁর বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার সঙ্গে আরও দুই পরীক্ষার্থী কুয়াকাটায় যায়। তারা কেন ও কী উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়েছিল বা মেয়েটি কীভাবে মারা গেল, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।
ওই কিশোরীর নানা অভিযোগ করে বলেন, রায়হান অপহরণ করে তাঁর নাতনিকে কুয়াকাটায় নিয়ে গেছে। তাঁদের ধারণা, সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি রায়হান ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
রায়হানের বাবা উজ্জ্বল খান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত কিশোরীর সঙ্গে রায়হানের সম্পর্কের খবর তাঁরা জানতেন। কিন্তু তাদের কুয়াকাটায় যাওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। বন্ধুর ভাইয়ের বিয়ের কথা বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। কুয়াকাটায় কী ঘটেছে, তা তাঁরা কিছুই জানেন না।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোহাম্মদ আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওই কিশোরীর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, সেটিও চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করবেন। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর নিহত কিশোরীর বান্ধবীকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তার স্বজনেরা এলে তাঁদের জিম্মায় দেওয়া হবে।