অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়ার কথা বলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই সরকারের দায়িত্ব অনেক বড়। সেই দায়িত্ব তাদের পালন করতে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি এবং করব।’
আজ রোববার বিকেলে সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপির মহাসচিব এ কথাগুলো বলেন। নগরের বিমানবন্দর এলাকার একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা ও মহানগর বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। আজ এই বাংলাদেশ যখন নতুনভাবে গড়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তখন আবার ভারতবর্ষ থেকে দুঃখজনকভাবে ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধি হাসিনা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের একটি অর্জন, নতুন দেশ গড়ার চেষ্টা, সেটিকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করার কাজ করেনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত জনগণের সম্পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় ছিল। শেষে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করার চেষ্টা করে সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর পরিকল্পিতভাবে জনগণের অধিকার হরণ করে ধারাবাহিকভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছিল। এরপর জনগণের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে দেশ আবার স্বাধীন হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয় মুক্তিযুদ্ধে যে ব্যক্তির নাম ছিল সবচেয়ে আগে; যাঁর কন্যা, যাঁকে তাঁর দলের লোকজন অনেক সময় গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলে, তাঁর এই পরিণতি। জনগণ তাঁকে ধিক্কার দিচ্ছে। দেশে হিসাব করলে দেখা যাবে, ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে সবচেয়ে ধিক্কৃত মানুষ হবেন শেখ হাসিনা। কারণ, তাঁর ক্ষমতার লোভ, অ্যারোগেন্স, করাপশন ও ভিন্নমত সহ্য করতে না পারা।’
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘দেশ ভয়াবহ বন্যায় পতিত হয়েছে। অনেকে প্রাণ খুইয়েছেন, যা গত ১০-১৫ বছরে দেখিনি। জানা গেছে, ঢলের পানির ফলে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বাঁধগুলো খুলে দিয়েছে। যার ফলে বন্যা দেখা দিয়েছে। দায়িত্ব যেটা রয়েছে ভাটির দেশ আমাদের জানানোর প্রয়োজন ছিল, বন্যা আসতে পারে, পানি নামতে পারে। এই জায়গাতে বড় একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে।’
বিভিন্ন সংগঠনকে দাবিদাওয়া নিয়ে এখনই আন্দোলনে না নামার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিয়ে জঞ্জাল পরিষ্কারের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দাবিদাওয়া তোলার কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি কখনোই দখলদারি সমর্থন করে না। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দলীয়ভাবে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় গুম হওয়া বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলীসহ অন্যদের নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন বলেও জানান তিনি।
মতবিনিময় সভার শুরুতে বক্তব্য দেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা, এনামুল হক চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।