আওয়ামী লীগের নেতারা গত শনিবার সকালে বিএনপি–কর্মীর মালিকানাধীন এই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বের করে দিয়ে মার্কেটটি তালাবদ্ধ করে দেন বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা
আওয়ামী লীগের নেতারা গত শনিবার সকালে বিএনপি–কর্মীর মালিকানাধীন এই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বের করে দিয়ে মার্কেটটি তালাবদ্ধ করে দেন বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা

আ.লীগ নেতার নেতৃত্বে বিএনপি–কর্মীর মার্কেটে ‘তালা’

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিএনপির এক কর্মীর মালিকানাধীন একটি মার্কেট তালাবদ্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রার কর্মসূচির আগে প্রস্তুতি সভায় যোগ দেওয়ায় মার্কেটটি তালাবদ্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওই বিএনপি–কর্মীর।

উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই বাজারের ওই মার্কেটের মালিকের নাম আক্কেল আলী সরদার (৪৫)। তাঁর মার্কেটের ৩টি ফ্লোরে ৪০টি দোকান ও ২টি ব্যাংকের শাখা আছে। তিনি অভিযোগ করেন, গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন মুন্সীসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা গত শনিবার সকালে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বের করে দিয়ে মার্কেটটি তালাবদ্ধ করে দেন।

তবে এই অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন মো. ফরহাদ হোসেন মুন্সী। তিনি বলেন, ‘আমি কারও মার্কেট বন্ধ করিনি, আক্কেল আলীর কর্মকাণ্ডে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন।’

খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচির আগে গত শুক্রবার রাতে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার মাঠে প্রস্তুতি সভা করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি–কর্মী আক্কেল আলী সরদার। প্রস্তুতি সভার খবর পেয়ে গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন মুন্সী তাঁর সমর্থকদের নিয়ে ওই এলাকায় গেলে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ফরহাদ হোসেন বাকাই বাজারে গিয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মী ও পুলিশে খবর দেন।

বাকাই বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, রাত ১০টার দিকে বাকাই বাজারে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক শ নেতা-কর্মী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন। বক্তব্যের এক সময় আওয়ামী লীগের নেতা ফরহাদ হোসেন মুন্সী বিএনপি–কর্মী আক্কেল আলীর মার্কেটটি তালাবদ্ধ করার ঘোষণা দেন।

তবে আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে মার্কেট বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন ফরহাদ হোসেন মুন্সী। তিনি বলেন, ‘আমি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, মার্কেট বন্ধের কোনো ঘোষণা আমি দিইনি।’

ভবনটিতে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখা আছে। শাখার ব্যবস্থাপক মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনমালিকের সঙ্গে রাজনৈতিক গণ্ডগোল রয়েছে, এ কারণে ছেলে পেলেরা এসেছিল।’

মার্কেটের নিচতলার ব্যবসায়ী আলম সরদার অভিযোগ করেন, ‘আক্কেল আলী সরদারের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ১৪ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছি। শুক্রবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা দোকানে এসে শনিবার থেকে দোকান বন্ধ করে মালামাল নিয়ে যেতে বলেন। না নিলে শনিবার সকাল থেকে তারা মার্কেট তালাবদ্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দিয়ে যান। আমি শনিবার সকালে দোকান খোলার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতারা এসে মার্কেট তালাবদ্ধ করে দেন।’ একই অভিযোগ করেন মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল জলিল খন্দকার, লাভলু সেরনিয়াবাত ও আনোয়ার হোসেন।

খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মতলেব মাতুব্বর বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন।

বাকাই বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দে বলেন, ‘বন্ধ করার সময় আমি ছিলাম না। তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে একটা সমস্যা চলছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

এ বিষয়ে কিছুই ‘জানেন না’ বলে জানান গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি।’