চুয়াডাঙ্গায় শিশুদের নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। জেলার সদর হাসপাতালের অন্তবিভাগে ২৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে সোমবার সকালে ১০৩ জন রোগী ভর্তি ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১০০ জনের বেশি শিশুকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি শিশু সেবা নিচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) মাহবুবুর রহমান জানান, আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ২ থেকে ৩ মাস বয়সী শিশুরা নিউমোনিয়া ও ৬ মাস থেকে দেড় বছর বয়সের শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস রোগ হচ্ছে। এ ছাড়া ঠান্ডাজনিত জ্বর, টাইফয়েড ও প্রস্রাবের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। এসব রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া আর কিছু না খাওয়ানো যাবে না। আর প্রয়োজনীয় সব টিকা দিতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুর শরীর ঘামলে তা মুছিয়ে দেওয়া এবং যাতে ঠান্ডা না লাগে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের শয্যাগুলোর একটিও ফাঁকা নেই। কোনো কোনো শয্যায় একাধিক শিশুকে রেখে চিকিৎসা চলছে। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় বেশির ভাগ শিশুকে মেঝেতে শুইয়ে রেখে স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
শুধু শিশু ওয়ার্ডেই না, হাসপাতালের তিনতলায় শিশু ও গাইনি ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী করিডর, শিশু ওয়ার্ডের বারান্দা, গাইনি ওয়ার্ডের উত্তর-দক্ষিণ বারান্দাতেও শয্যা পেতে চলছে শিশুদের চিকিৎসা। কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম অবস্থা।
চার মাস বয়সী শিশু সোলায়মানের কান্না সামাল দিতে নানি আলোমতি বেগম হাঁপিয়ে উঠেছেন। ছুটছেন হাসপাতালের তিনতলার করিডরের এ মাথা থেকে অন্য মাথা। সন্তানের কান্না দেখে মা সুমাইয়া খাতুনও সমানে কাঁদছেন। ফলে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলো না।
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাদিখালী গ্রাম থেকে আসা আলোমতি বলেন, ‘তিন দিন ধরে একেনে নাইচ্ছেলের আনিচি। আবস্তা অ্যাকন ভালোই। তেবে খালি কানচে।’
পৌর এলাকার হাজরহাটি গ্রামের গৃহবধূ ইসমত আরা ঠান্ডা জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত শিশু আরিয়ানকে নিয়ে ছয় দিন হাসপাতালে ভর্তি। বললেন, ‘ওষুদ কিনার ট্যাকা নেই। হাসপাতালতি যে ওষুদ দেচ্চে তাই ভরসা। ডাক্তার-নার্সরা বাইরিত্তি কিচু ওষুদ কিনতি বুললিও ট্যাকার অভাবে কিনিতি পারচি নে। ইর-উর কাচতি সাহায্য নি ওষুদ কিনচি। ছেলের সর্দি কুমলিউ কাশি কোমচে না।’
সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের বাসিন্দা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত চার মাস বয়সী শিশু মুনিয়ার বাঁ হাতে ক্যানুলা লাগানো। শিশুটি বারবার ক্যানুলা লাগানো হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর কাঁদছে। মা-নানি মিলে ফুল-পাখিসহ এটা–ওটা দেখিয়েও সামলাতে পারছেন না।
শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স জলি খাতুন ছাড়াও দুজন জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স আয়েশা খাতুন ও নাজমা খাতুন রোগীদের সামলাচ্ছেন। তাঁদের ৭ জন স্টুডেন্ট নার্স ও ম্যাটসের ইন্টার্নরত সদস্যরা সহযোগিতা করছেন।
জলি খাতুন জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন শিশু ওয়ার্ডে ২৫ শয্যার বিপরীতে ১০০ জনের ওপর শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। গত শনিবার সবচেয়ে বাজে অবস্থা ছিল। ওই দিন আগে থেকে ১১৫ জন শিশু ভর্তি ছিল, নতুন করে ভর্তি হয় আরও ৩৫ জন। বিপুলসংখ্যক রোগী সামাল দিতে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। এক শিশুর চিকিৎসা শেষ হতে না হতেই আরেক শিশুর অভিভাবক ডাক দেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে সোমবার ৩৯৯ জন ভর্তি ছিল। শিশুসহ প্রতিটি ওয়ার্ডের উপচে পড়া ভিড়। সীমিত জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ সেবাদানের চেষ্টা চলছে।