গাজীপুরে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে শ্রমিক বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধের কারণে অনেক মানুষ হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। আজ সকাল ৮টার দিকে মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায়
গাজীপুরে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে শ্রমিক বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধের কারণে অনেক মানুষ হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। আজ সকাল ৮টার দিকে মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায়

৪৮ ঘণ্টা পরও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ছাড়েননি শ্রমিকেরা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন গাজীপুরের টিএনজেড অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকেরা। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও বেতন না পাওয়ায় টানা ৪৮ ঘণ্টা ধরে মহাসড়কটি অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা। আজ সোমবার সকাল আটটার দিকে নগরের মালেকের বাড়ি এলাকায় শ্রমিকদের এ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আশপাশের মোট ১২টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের মোগরখাল এলাকায় টিএনজেড অ্যাপারেলসের ছয়টি কারখানার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক গত তিন মাস বেতন পাচ্ছেন না। কয়েক দফা আন্দোলনের সময় শিল্প পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছিলেন। শ্রমিকেরা তা মেনে নিয়ে আবার কাজে ফিরে যান। কিন্তু কয়েক দফায় বেতন পরিশোধের দিন নির্ধারিত হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তা করেনি।

এতে শ্রমিকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত শনিবার সকাল আটটা থেকে কারখানার সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। ওই দিন সকাল পৌনে নয়টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এর পর থেকেই মহাসড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৪৮ ঘণ্টা ধরে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও চালকেরা। অনেকে ট্রেনে বা বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে গন্তব্যে যাতায়াতের চেষ্টা করছেন।

আজ সকালে দেখা যায়, শ্রমিকদের কেউ রাস্তায় বসে আছেন, কেউ কেউ স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁদের অধিকাংশের হাতেই লাঠিসোঁটা। কোনো যানবাহন যাওয়ার চেষ্টা করলেই সেগুলো আটকানোর চেষ্টা করছেন। রাতে যেসব শ্রমিক সড়কে অবস্থান করেছেন, তাঁদের অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন, আবার নতুন করে মহাসড়কে এসে অবস্থান নিচ্ছেন শ্রমিকদের আরেকটি অংশ। মাইকে তাঁদের সংঘবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছিলেন কেউ কেউ। এমন অবস্থায় মহাসড়কটির উভয় পাশে আজও দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক যাত্রীই হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ঘটনাস্থলে থানা-পুলিশ ও শিল্প পুলিশের উপস্থিতিও দেখা গেছে।

ঘরভাড়া দিতে পারছিনে দুই মাস ধরে। যেখানে ভাড়া থাহি, পাশের একটি দোকান থেকে বাকি খাচ্ছি; তাকেও টাকা দিতে পারছিনে। প্রতিদিন দোকানের সামনে দিয়ে এলেই বাকি টাকাডা চাচ্ছে। অথচ আমাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামতে হইছে।
হাবিবুর রহমান, শ্রমিক

অবরোধে অংশ নেওয়া হাবিবুর রহমান নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘ঘরভাড়া দিতে পারছিনে দুই মাস ধরে। যেখানে ভাড়া থাহি, পাশের একটি দোকান থেকে বাকি খাচ্ছি; তাকেও টাকা দিতে পারছিনে। প্রতিদিন দোকানের সামনে দিয়ে এলেই বাকি টাকাডা চাচ্ছে। অথচ আমাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামতে হইছে।’

শহিদুল ইসলাম নামের আরেক শ্রমিক বলেন, যতক্ষণ বেতন না পাচ্ছেন, ততক্ষণ রাস্তা থেকে সরবেন না। বেতন নিয়েই বাড়ি ফিরবেন। বেতন আদায় করতে রাস্তা বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

আমরা কোন মুখে ওদের বলব, তোমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করো; তোমাদের একটা ব্যবস্থা আমরা করে দেব? আমরা তাদের একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দা, মহাসড়ক ছাড়বে না।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম

এ বিষয়ে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘মালিকপক্ষকে একাধিকবার সময় দেওয়া হয়েছিল, ওনারা বারবার বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে শ্রমিকেরা এখন আর আমাদের কথা বিশ্বাস করছে না। আমরা কোন মুখে ওদের বলব, তোমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করো; তোমাদের একটা ব্যবস্থা আমরা করে দেব? আমরা তাদের একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওরা নাছোড়বান্দা, মহাসড়ক ছাড়বে না। আমার ধারণা, শ্রমিকেরা মনে করে—মহাসড়ক বন্ধ করতে পারলে মালিকের ওপর চাপ আসে, টাকার ব্যবস্থা করতে হয়। তাদের এমন ধারণা থেকেই সড়কে বসে আছে।’

টিএনজেড গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেদায়তুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই মাস হয়েছে আমি কারখানার দায়িত্ব নিয়েছি। কারখানার জরুরি মুহূর্তে টাকার প্রয়োজন মেটাতে আমার যে এফডিআর আছে, সেই টাকা ব্যাংক দিচ্ছে না। ব্যাংক বলছে, আমার এফডিআর লোনের সঙ্গে যুক্ত করে রাখা হয়েছে। এখন কারখানার ক্রাইসিস মুহূর্তে সেই টাকা নিতে পারছি না। শ্রমিকদের বেতন দিতে প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য ব্যাংকে একটি লোনের আবেদন করেছি, সেই লোনও তারা দিচ্ছে না। গতকাল বিজিএমইএতে (তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন) বৈঠক করেছি। সেখানে আমার বাড়ির দলিল দিয়ে বলেছি, এই জমির বিনিময়ে হলেও আমাকে ছয় কোটি টাকা লোনের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু বিজিএমইএ কোনো সমাধান করতে পারেনি।’