জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. আব্বাস উদ্দীনের ভাড়া বাসার গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকে তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাসা থেকে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা চুরির ঘটনাও ঘটে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে শহরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই বিচারক বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দীন গত ৩১ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলার ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ডের (ফাঁসি) আদেশ দিয়েছিলেন ওই বিচারক। ওই মামলার পলাতক আসামি ও তাঁদের সহযোগীরা এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন বাদী।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নুরে আলমের নেতৃত্বে আজ বিকেলে সদর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবির সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বিচারকের বাসায় চুরির ঘটনায় তিনি থানায় একটি এজাহার দিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। বিকেলে পুলিশ সুপারসহ তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সার্বিক বিবেচনায় ঘটনাটিকে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তাঁরা খুবই গভীরভাবে ঘটনাটি তদন্ত করছেন। ওই বাসার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ শোবার ঘরের দরজার তালা খোলার শব্দ শুনে তাঁদের (স্বামী-স্ত্রী) ঘুম ভেঙে যায়। তখন তিনি সদর থানার ওসিকে ফোন করেন এবং তাঁর স্ত্রী বাসার পাশে থাকা পুলিশের কনস্টেবল আরিফুলকে ফোন করেন। এর মধ্যে দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে পড়ে। এ সময় আনুমানিক সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতার এক দুর্বৃত্ত হাতে এক ফুট লম্বা ছোরা দেখিয়ে তাঁকে (বাদী) হুমকি দেয়, ‘তুই বেদীন, আমার লোকজনকে ফাঁসি দিয়েছিস। এখন তোর ফাঁসি দিতে এসেছি।’ এক দুর্বৃত্ত এগিয়ে আসতেই কনস্টেবল আরিফ বেলকনিতে এসে বলেন, ‘স্যার, কী হয়েছে? আমরা এসেছি।’ ওই কথা শোনার পরপরই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পরে পুলিশ কনস্টেবল আরিফসহ বাসার মালিক ও তাঁর স্ত্রী ঘরে আসেন। তখন তাঁরা পূর্ব পাশের কক্ষের জানালার গ্রিল কাটা ও ড্রয়িংরুমে ব্রিফকেসের মালামাল ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় দেখতে পান। দুর্বৃত্তরা ব্রিফকেসে থাকা পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। ৩১ জানুয়ারি একটি হত্যা মামলায় আসামি বেদারুল ইসলাম ওরফে বেদীনসহ ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন তিনি। আসামিদের পিসিপিআর খুবই খারাপ। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা আছে। তিনি ধারণা করছেন, ওই মামলার পলাতক আসামিরা নিজেরা বা কাউকে দিয়ে তাঁকে হত্যা করতে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
জয়পুরহাট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল প্রথম আলোকে বলেন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দীনের বাসায় চুরির ঘটনাটি বিকেলে জেনেছেন। পুলিশ দ্রুত প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।