কৃষি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার

সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আম রংপুরের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে

রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম বেশ জনপ্রিয়। খুব কম সময়ে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। এই আমের বৈশিষ্ট্য হলো এটি আঁশবিহীন ও সুস্বাদু। এই আম বদলে দিয়েছে চাষিদের ভাগ্য। নফল উদ্দিন পাইকার নামের একজন বৃক্ষবিলাসি ব্যক্তির লাগানো এই আমের নাম ছিল শুরুতে ‘মালদিয়া’। পরে এর নামকরণ হয় ‘হাঁড়িভাঙ্গা’। এই আমের নানা কিছু নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডলের সঙ্গে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল
প্রশ্ন

প্রথম আলো: রংপুরের আম হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হাঁড়িভাঙ্গা আম সম্পর্কে কিছু বলুন।

ওবায়দুর রহমান মণ্ডল: মানুষের মুখে মুখে এই আমের কদর ছড়িয়ে পড়েছে। পত্রপত্রিকায় রংপুরের ব্র্যান্ড হিসেবে হাঁড়িভাঙ্গার কথা লেখা হলেও সরকারি পর্যায়ে তা বলা হচ্ছে না। রংপুরের ব্র্যান্ড হিসেবে হাঁড়িভাঙ্গার স্বীকৃতির জন্য রংপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কম চাষাবাদ হলেও এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। এর কারণ কী?

ওবায়দুর রহমান মণ্ডল: গত বছর থেকে চলতি বছর ৬১৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ কম হয়েছে। তবে আমের ফলন ভালো হয়েছে। এর কারণ, জুনের মাঝামাঝি সময়ের আগে গাছ থেকে আম পাড়া একেবারে নিষেধ ছিল। চাষিদের বোঝানো হয়েছে যে আম পরিপক্ব না হলে গাছ থেকে আম পাড়া যাবে না। চাষিরা আমাদের কথা শুনেছেন। মধ্য জুনে আম পুরোপুরি পরিপক্ব হলে আমের ওজন ভালো হয়। ফলনও ভালো হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১৩ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হওয়ার কথা থাকলেও সেটি ১৪ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। আম বেচাকেনা হয়েছে ২০০ কোটি টাকার বেশি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: হাঁড়িভাঙ্গা আম এখন বিদেশেও যাচ্ছে...

ওবায়দুর রহমান মণ্ডল: এই আম শুধু আঁশবিহীন বললে ভুল হবে। অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। সেই সঙ্গে আমের আঁটিও খুব ছোট। ছাল পাতলা। এই আমের উপযোগী হলো লাল মাটি। রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার লাল মাটি এলাকায় উৎপাদন ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন এই আমের চাষাবাদ হচ্ছে। রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও চলে গেছে। বিদেশিদের আপ্যায়ন করা হচ্ছে এই আম দিয়ে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। সাধারণ প্রতিটি আম ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ওজন আরও বেশি হয়ে থাকে। গত ২০-২২ বছর থেকে আস্তে আস্তে প্রচার পেতে থাকে এই আমের বাজার। প্রতিবছরই এর বিস্তৃতি বাড়ছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাষাবাদ ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে কিছু বলুন।

ওবায়দুর রহমান মণ্ডল: সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আম রংপুর অঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। আমটি দেশে-বিদেশে খ্যাতি পেয়েছে। আরও ভালো উদ্যোগ নিলে এই আম দিয়ে বছরে শত শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। রংপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গ্রুপ মিটিংয়ের মাধ্যমে আরও ভালো কিছু করতে চাষিদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আমের বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বিপণনে এগিয়ে এসেছেন। দূরদূরান্তের জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসছেন। এটিও একটি ভালো দিক বলে আমরা মনে করি।