আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই স্থানে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়ার জেরে দুই দিন ধরে নাটোর শহরে উত্তেজনা চলছিল। আজ শনিবার দুপুরে শহরের আলাইপুরে কাছাকাছি জায়গায় উভয় দল সমাবেশ শুরু করলে দুই দলের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। উভয় দলের দাবি, তাঁদের অন্তত ২০ জন করে আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেলা আড়াইটায় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ পরিবেষ্টিত অবস্থায় বিএনপির অবস্থান সমাবেশ চলছিল। এ সময় পূর্ব দিকের মুসলিম ইনস্টিটিটিউটের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা সমাবেশস্থলের দিকে আসার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ সড়কে মানবপ্রাচীর তৈরি করে।
সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার (দুলু) বক্তব্য শুরু করেন। তখন আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে খুব কাছাকাছি চলে আসেন। এ অবস্থায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশ শেষ করে রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের বাড়িতে (জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়) ঢুকে পড়েন। ওই বাড়ির ছাদ থেকে তখন ইটপাটকেল ছোড়া হচ্ছিল। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও বিএনপি কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং উভয় দলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেয়। সংঘর্ষে আহত হন সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম (৩৫), জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন বিপ্লব (৪২) ও পৌর যুবলীগের সভাপতি সাঈম হোসেন উজ্জলসহ (৩৮) অনেকে। তবে সদর হাসপাতালে গিয়ে রুহুল আমীন বিপ্লব ও সাঈম হোসেন উজ্জলকে ভর্তি অবস্থায় দেখা যায়।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ তাঁদের অবস্থান সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। তাঁরা কর্মসূচি পালনের জন্য উপশহর মাঠে মঞ্চ ও প্যান্ডেল করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মীরা বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের মঞ্চ ও প্যান্ডেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও একই স্থানে শান্তি সমাবেশ ডাকা হয়। এতে শহরে উত্তেজনা দেখা দিলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাঁরা কর্মসূচি পালন করেন। বেলা আড়াইটায় হঠাৎ আওয়ামী লীগের কর্মীরা পুলিশকে উপেক্ষা করে তাঁদের সমাবেশে হামলা করেন। এতে তাঁদের অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
বিএনপির কার্যালয় থেকে ইটপাটকেল ও গুলি ছোড়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে রহিম নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা আত্মরক্ষার্থে আমাদের কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েছিলাম। আমরা ইটপাটকেল ছুড়িনি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, উপশহর মাঠে তাঁদের পূর্বঘোষিত শান্তি সমাবেশ করার জন্য আজ দুপুরে নেতা–কর্মীরা যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিএনপি কার্যালয়ের কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিএনপির কর্মীরা ইটপাটকেল ও গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এতে তাঁদের অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহত দুই যুবলীগ নেতাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।
নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, আজকের ঘটনায় পুলিশ কোনো গুলি করেনি। গুলিবর্ষণ বা ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। মামলা হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে কি না, যাচাই করে মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।