সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী ও তাঁর স্বামী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে আজ সোমবার দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসিফ আল-মাহমুদ ও শাহ আলম সেখ বাদী হয়ে এ মামলা দুটি করেন। দুদক পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শহিদুল আলম সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ নভেম্বর জান্নাত আরা হেনরী, তাঁর স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তাঁদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয় গত ২০ আগস্ট। এ অনুসন্ধান শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার ও ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য-প্রমাণ পায় দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৭ (১) ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় আজ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় দশক আগে জান্নাত আরা হেনরীর বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ২২ হাজার এবং ব্যয় ছিল ৮০ হাজার টাকা। তখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তাঁর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৫৬ কোটি ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৬০২ টাকা। এ ছাড়া তাঁর স্থাবর সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্যে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০০৮ সাল থেকে গত সাড়ে ১৫ বছরে হেনরীর সম্পদ ৮৮৪ গুণ বেড়েছে। একই সময়ে তাঁর স্বামী শামীম তালুকদারের সম্পদ বেড়েছে ১৩৬ গুণ।
সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেনরী সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সিরাজগঞ্জে হেনরী ও তাঁর স্বামীর ১৬টি বাড়ি, দুটি রিসোর্ট, একটি গরুর খামারসহ কয়েক হাজার শতক কৃষি ও অকৃষিজমি রয়েছে। হেনরীর রয়েছে অন্তত ৯টি বিলাসবহুল গাড়ি। ঢাকার মিরপুরে ফ্ল্যাট ও জমি আছে। আছে ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন তাঁরা।
হেনরী একসময় স্কুলশিক্ষক ছিলেন। ওই চাকরি করা অবস্থায় ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিয়ে তিনি পরাজিত হন। পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ২০০৯ সালে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান হেনরী। তাঁর এ দায়িত্ব পালনকালে আলোচিত হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঋণ জালিয়াতির হোতা হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও কয়েকজন ঘুষ নিয়েছেন বলে জানান। দুদক তানভীর ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিল করলেও পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁদের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। হেনরীকেও দায়মুক্তি দেয় দুদক। বর্তমানে এই দম্পতির বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় তিনটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। গত ১ অক্টোবর মৌলভীবাজার গ্রেপ্তার হয়ে হেনরী ও তাঁর স্বামী শামীম তালুকদার কারাগারে রয়েছেন।