চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় দারোগাহাট ওজন স্কেল ভাঙচুরের ১৫ দিনেও সচল হয়নি। ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বিজয় মিছিল থেকে ওজন স্কেল ভাঙচুর করা হয়। এর পর থেকেই ওজন স্কেলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে বিনা বাধায় অবাধে চলছে পণ্যবাহী ভারী যানবাহন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।
ওজন স্কেল না থাকায় পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা তাঁদের ইচ্ছেমতো পণ্য বোঝাই করে চলাচল করছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। মহাসড়কের ওপর ভারী যানবাহনের প্রভাব ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে। টানা বৃষ্টি ও অবাধে ভারী পণ্য পরিবহনের কারণে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওজন স্কেলের পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে রয়েছে। সেন্সরের খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও একটি সেন্সরও নেই। সার্ভার কক্ষ ও কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং ইউনিট তছনছ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সব তার ছেঁড়া। কিছু ডিভাইস ভাঙচুর অবস্থায় পড়ে আছে। ওজন স্কেলের কর্মকর্তাদের বসার কার্যালয় ও সড়কের ওপরের জরিমানা আদায়ের বক্সগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে উদ্বোধনী নামফলক।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিধ্বস্ত ওজন স্কেল ভবনের জানালার কাচ মেরামত করছিলেন দুজন শ্রমিক। ওজন স্কেলের দুই পাশে মোট পাঁচজন আনসার সদস্য তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন। পণ্যবাহী গাড়িগুলো ওজন স্কেলে ঢোকার বাইপাস সড়ক দিয়ে না গিয়ে মূল মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করছিল।
ওজন স্কেলটি পরিচালনা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান র্যাগনাম রিসোর্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বড় দারোগাহাট ওজন স্কেলের ইনচার্জ সালাউদ্দিন আহমেদ সেদিনের ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন এই প্রতিবেদককে ঘুরিয়ে দেখান। এ সময় তিনি কীভাবে ঘটনা ঘটেছে, সে বর্ণনা দেন।
সালাউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট তাঁদের কর্মীরা প্রতিদিনের মতো ওজন স্কেলে কাজ করছিলেন। ঠিক বিকেল পাঁচটায় একদল লোক মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে ওজন স্কেলের দক্ষিণ দিক থেকে বিজয় মিছিল করতে করতে উত্তর দিকে যাচ্ছিল। মিছিলটি ওজন স্কেলের ঢোকার বাইপাস সড়ক ধরে পশ্চিমাংশের কার্যালয়ের দিকে যেতে থাকে। সিসি ক্যামেরার কাছে এলেই একজন ক্যামেরাটি ভেঙে ফেলেন। এরপর অন্যরা হুড়মুড়িয়ে পশ্চিমাংশের কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুর করে ভেতরে ঢুকে পড়েন। সেখানে থাকা কম্পিউটারের মনিটরসহ বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করেন। তারপর তাঁরা সার্ভার সিস্টেমের তার টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।
সওজের কর্মকর্তারা বলছেন, ওজন স্কেল না থাকায় সড়ক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে। আদায় করা যাচ্ছে না অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ির জরিমানা। ফলে রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওজন স্কেল চালু করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
সওজ সীতাকুণ্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মোহাম্মদ ফারহান প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে তাঁরা জরিমানা আদায়কারীর বক্স এবং তাঁদের কার্যালয় দুটির সংস্কারকাজ শুরু করেছেন। কম্পিউটার সিস্টেম ঠিক করার চেষ্টা চলছে। চলতি সপ্তাহে ওজন স্কেল চালু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।